আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি নূর মোহাম্মদকে অভিবন্দনা
বীর মুক্তিযোদ্ধা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি নূর মোহাম্মদকে (৮৭) অভিবন্দনা জানিয়েছে ফরিদপুর নাগরিক মঞ্চ। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির শুভক্ষণে এ বীর সেনানীকে এ সম্মাননা প্রদান করা হয়। শুক্রবার (২৬ মার্চ) দুপুরে ফরিদপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
শুরুতে ‘ও আমার দেশের মাটি, তোমার পরে ঠেকাই মাথা’-শিল্পী নিলয় চক্রবর্ত্তীর গাওয়া গানের মধ্যে নূর মোহাম্মদকে মঞ্চে নিয়ে আসেন ফরিদপুর নাগরিক মঞ্চের সভাপতি আওদাদ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক পান্না বালা। এসময় মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেন নূর মোহাম্মদ।
বিজ্ঞাপন
পরে ‘অভিবন্দনা’ পাঠ করেন নাগরিক মঞ্চের সদস্য বিপ্লব বালা। অভিবন্দনার শুরুতে বলা হয়, ‘নূর মোহাম্মদ দেশ ও জাতির মনে আপনার জন্য চিরস্থায়ী আসন পাতা হয়েছে ৫৩ বছর আগেই আগতলতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রদানকালে। যেন এক অজ্ঞাত বাসে, ৬২ থেকে ৬৪ সাল থেকে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার সলতে পাকিয়েছিলেন পরশ নামের আড়ালে পরশমনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বসে নাম নিয়েছিলেন আপনি সবুজ। সে ছিল পবিত্র এক শিখা প্রজ্জ্বলন আপনাদের, একদিন যার ফুলকি ছড়িয়ে দিয়েছিলেন বাংলর ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলে।’
পরে নূর মোহাম্মদকে উত্তরীয় পড়িয়ে দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান ও নূর মোহাম্মদের সহযোদ্ধা বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার আশরাফউজ্জামান মুরাদ। সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন ফরিদপুর নাগরিক মঞ্চের সভাপতি আওয়াদ হোসেন ও ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকী।
বিজ্ঞাপন
অনুষ্ঠানে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে সপ্তাশীতম বর্ণীল বসন্ত অতিক্রান্ত ঋজুদেহী স্পস্টভাষী নূর মোহাম্মদ বলেন, পাকিস্তানি নৌবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় বঞ্চনার কথা জানতে পেরে দেশের মুক্তির কথা ভেবেছি। মুক্তিযুদ্ধে গ্রামের গরিব, সহজ, সরল খেটে খাওয়া মানুষকে নিয়ে গড়া মুক্তিবাহিনীর একটি অংশের নেতৃত্ব দিয়েছি। কোনো বড়লোক যুদ্ধ করেনি। এ যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল সাধারণ মানুষ। মুক্তিযুদ্ধে অনেক কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হযেছে। যুদ্ধে যেসব সহযোদ্ধারা শহিদ হয়েছেন তাদের লাশ সহযোদ্ধাদের দেখতে পর্যন্ত দেইনি পাছে তাদের মনোবল ভেঙে না যায়।
নূর মোহাম্মদ বলেন, সম্মান বা সম্মাননা পাওয়ার জন্য যুদ্ধ করিনি। যুদ্ধ করেছি নিজের দেশের মুক্তির জন্য, স্বাধীনতার জন্য, পতাকার জন্য, একটি মানচিত্রের জন্য। আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি।
সভায় সভাপতিত্ব করেন ফরিদপুর নাগরিক মঞ্চের সভাপতি আওলাদ হোসেন। সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ফরিদপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মো. শামসুল হক ভোলা মাস্টার, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শামীম হক, নূর মোহাম্মদের সহযোদ্ধা খন্দকার আশরাফউজ্জামান মুরাদ, ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকী।
বক্তব্য রাখতে গিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ফরিদপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শামসুল হক বলেন, নূর মোহাম্মদের সব কাজ এক একটি ইতিহাস। প্রথমে মনে হতো তিনি উন্মাদের মত কি সব করে যাচ্ছেন। পরে উপলব্ধি করে বুঝতে পেরেছি তিনি যা করেছেন সেটাই সঠিক। নূর মোহাম্মদের একক চেষ্টায় ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ইমাম উদ্দীন আহম্মাদের নামে ইমাম উদ্দিন স্কোয়ার নামকরণ, গণকবর চিহ্নিত করে সেখানে স্তম্ভ নির্মাণ এবং নিজের বাড়িতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মিনি জাদুঘর নির্মাণ করা প্রভৃতি কর্মযজ্ঞ পরিচালিত হয়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শামীম হক বলেন, এ শহরে স্বাধীনতা বিরোধীদের নামে অনেক সড়কের নামকরণ করা হয়েছে অথচ মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের নামে সড়কের নামকরণ করা তেমন ভাবে করা হয়নি। যারা শহীদ হয়েছে সেইসব শহিদ পরিবারের কথা আমরা মনে রাখিনি, তাদের মূল্যায়ন করা হয়নি। এটি জাতিগতভাবে আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যের ব্যাপার।
বি কে সিকদার সজল/এমএএস