গাজীপুরে গাছা থানা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে নির্বাচন পরবর্তী মূল্যায়ন সভায় বক্তব্য দেওয়াকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ও চেয়ার ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৬ জন আহত হয়েছেন। সোমবার (৫ জুন) সকালে মোল্লা কনভেনশন সেন্টারে এ ঘটনা ঘটে। 

আহতদের মধ্যে রয়েছেন, গাছা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য হাসান উদ্দিন মাস্টার, ৩৪নং ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা এমারত হোসেন, মৎস্যজীবী লীগ নেতা আশিকুর রহমান, সেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ফরহাদ হোসেন, দলের সমর্থক রমজান আলী ও রফিকুল ইসলাম। 

গাজীপুর সিটি নির্বাচনের আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান পরাজিত হওয়ার পর গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের থানা ও ওয়ার্ড কমিটির সদস্যদের নিয়ে গত ৩১ মে থেকে নির্বাচন পরবর্তী মূল্যায়ন সভার আয়োজন করা হয়। সোমবার ছিল গাছা থানা আওয়ামী লীগের সভা। আগামী ৮ জুন এ মূল্যায়ন সভা শেষ হবে।

সভায় নেতাকর্মীদের শান্ত করতে নিজেই মাইক হাতে বক্তব্য দেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান। তিনি বলেন, যেকোনো সভায় এ ধরনের হট্টগোলের অর্থ হলো দলের ক্ষতি করা। এটা আমাদের জন্য দুঃখজনক। একজন আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে লজ্জাজনক। তবে কিছু সময় পর উপস্থিত নেতাকর্মীরা শান্ত হয়।

আজমত উল্লা খানকে গত রোববার গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। অনুষ্ঠানে উপস্থিত নেতাকর্মীরা জানান, গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানার বোর্ডবাজার এলাকায় মোল্লা কনভেনশন সেন্টারে বেলা সোয়া ১১টায় শুরু নির্বাচন-পরবর্তী মূল্যায়ন সভা। সভার শুরুতেই বক্তব্য দেওয়ার জন্য স্থানীয় এক নেতার নাম ডাকা হয়। তখন অপর একটি পক্ষ তাকে বক্তব্য না দেওয়ার অনুরোধ করে হইচই শুরু করেন। এসময় দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে। এক পর্যায়ে ওই কনভেনশন সেন্টারে থাকা চেয়ার দিয়ে একে অপরের উপর ছুড়তে থাকে। পরে সেখানে থাকা নেতারা তাদের নিয়ন্ত্রণ করে পরিস্থিতি শান্ত করেন। এতে অন্তত ৬ জন আহত হয়। আহতরা স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন বলে জানা গেছে। 

মূল্যায়ন সভায় উপস্থিত ছিলেন ৩৬নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল্লাহ আল মামুন মন্ডল। তিনি বলেন, যারা নির্বাচনে সরাসরি শ্রম ঘাম দিয়েছে তাদের বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ না দিয়ে যারা নির্বাচনে গোপনে বিরোধী পক্ষকে জেতাতে কাজ করেছে তাদের সুযোগ দেওয়া হয় আগে। এসময় দর্শক সারিতে থাকা নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ জানিয়ে হট্টগোল তৈরি করে। তবে তা কিছু সময়ের মধ্যেই তা ঠিক হয়ে যায়। হট্টগোলের মধ্যে চেয়ার ছোড়াছুড়ির ঘটনায় কয়েকজন সামান্য আহত হয়েছে, তবে তা গুরুতর নয়।

মূল্যায়ন সভায় সিটি নির্বাচনের পরাজিত প্রার্থী আজমত উল্লা খান বলেন, দলের নেতাকর্মী হয়ে যারা নৌকাকে পরাজিত করেছেন তাদের লজ্জা থাকা উচিত। মঞ্চে যারা বক্তব্য দিতে চান কথা বলতে চান তারা সবাই তার নিজ কেন্দ্রের ফলাফল আগে ঘোষণা দিবেন পরে তার কথা শুরু করবেন। আপনার কেন্দ্রের ফলাফল জানা না থাকলে কথা বলার প্রয়োজন নেই।

তিনি আরও বলেন, ৩৮নং ওয়ার্ডে একজন কাউন্সিলর প্রার্থীর সভায় আমাদের একজন কর্মী নৌকার পক্ষে ভোট চাওয়ায় এক নেতা তাকে শুধু মাইরটাই বাকি রেখেছে। আমার কাছে সব তথ্য আছে। আমাদের দলকে সুসংগঠিত করতে হবে। যাতে আগামী দিনে কেউ আবার আমাদের মধ্যে ঢুকে বিভ্রান্তি করে আবার নৌকাকে না হারিয়ে দিতে পারে।

মূল্যায়ন সভায় তিনি আরও বলেন, আমাকে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান করায় অনেকেই আত্মহারা হয়ে উঠেছেন। কেউ কেউ নিজেই প্রেসিডেন্ট হয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ নিজেই প্রেসিডেন্ট হতে চাচ্ছেন। দয়া করে গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ধারা ৭ দেখবেন।

আজমত উল্লা খান বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাদের থেকে ভালো বুঝেন। তিনি দল পুর্নগঠনের পাশাপাশি এই দায়িত্ব দিয়েছেন। দলকে পরিশুদ্ধ করার জন্য, আগামী দিনে প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আনার জন্য কে কত বড় নেতা বক্তব্য দিতে চান এখানে। বুকে হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করেন আপনার ছেলেরা কি করছে। যিনি নিজের স্ত্রীকে নৌকার পক্ষে আনতে পারেন না, সন্তানকে আনতে পারেন না। তার আওয়ামী লীগের থাকা উচিত হবে না। সব তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে সব রিপোর্ট করা হবে।

নিজের পরাজয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি যদি বিএনপি জামাতের কাছে হারতাম তাহলে আমার দুঃখ থাকতো। আমি ভাবতাম সংগঠনকে ঠিকমতো গোছাইতে পারিনি। কিন্তু আমাকে হারাইছে নিজ দলের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগের কাছে হেরেছি এজন্য ভেতরে রক্তক্ষরণ হলেও মুখে অন্তত হাসি রয়েছে কারণ আমি বিএনপি জামাতের কাছে হারিনি।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন গাছা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইব্রাহিম হোসেন বলেন, পূর্ব থেকেই আইনশৃঙ্খলা বজায়ের স্বার্থে সেখানে পুলিশ দায়িত্ব পালন করছিল। হঠাৎ সেখানে সাময়িক সময়ের জন্য উত্তেজনা তৈরি হয়। তবে কেউ আহত হওয়ার খবর আমরা পাইনি।

শিহাব খান/আরকে