সরকার নিরপেক্ষ নির্বাচনে আন্তরিক নয় : তাপস
বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙল প্রতীকের প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস। শুরু থেকেই তিনি নির্বাচন কমিশনের অসহযোগিতা এবং একপাক্ষিক আচরণের অভিযোগ তুলে আসছেন। সর্বশেষ ভোটের মাঠ ও সমসাময়িক প্রসঙ্গ নিয়ে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ঢাকা পোস্টের নিজস্ব প্রতিবেদক সৈয়দ মেহেদী হাসান।
ঢাকা পোস্ট : মানুষ কী কারণে আপনাকে ভোট দেবে বলে মনে করেন?
বিজ্ঞাপন
ইকবাল হোসেন তাপস : বরিশালবাসী যোগ্য প্রার্থী খুঁজছে। বিগত পাঁচ বছর অমাবস্যার অন্ধকারের মতো মারাত্মক রকমের খারাপ অবস্থায় ছিল। মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। নাগরিকরা একজন ভালো ও যোগ্য মানুষ খুঁজছে। বিশেষ করে বরিশাল শহরের মানুষ আওয়ামী লীগের ওপর বিরক্ত। আওয়ামী লীগ মানুষকে ভোট দিতে দেয় না, উন্নয়নও করে না। আমি দীর্ঘদিন ধরে বরিশালের মানুষের সঙ্গে কাজ করছি। আমার ব্যক্তিগত সংগঠন ‘ফরএভার লিভিং সোসাইটি’র মাধ্যমে মানুষকে সেবা দিয়েছি। ভোটাররা আমার মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা এবং নির্ভরতা খুঁজে পাচ্ছে বলে মনে হয়। এজন্য মানুষ আমাকে ভোট দেবেন।
ঢাকা পোস্ট : জাতীয় পার্টি সরকারের সমমনা হিসেবে রাজনীতি করে আসছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কিনা?
বিজ্ঞাপন
ইকবাল হোসেন তাপস : এই কথা অতীত। আর জাতীয় পার্টি যখন সরকারে ছিল তখন আওয়ামী লীগও জাতীয় পার্টির সঙ্গে নির্বাচন করেছে। ২০১৮ সালে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করেছিল। কিন্তু সেই জোট এখন আর নেই। রাজনীতি রাজনীতির ধারায় চলতে থাকবে। জাতীয় পার্টির সঙ্গে এখন আর এই সরকারের সংশ্লিষ্টতা নেই।
ঢাকা পোস্ট : শুরু থেকেই আপনি নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করছেন, অসহযোগিতার অভিযোগ এনেছেন। কমিশনে অভিযোগ করে কোনো প্রতিকার পাননি। তারপরও ঝুঁকি নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন কেন?
ইকবাল হোসেন তাপস : আমি নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা নয় প্রকৃত সত্যিটা বলেছি। যতই বাধা বিপত্তি আসুক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ জনগণের কথা বলেই যাবেন। কোনো স্বৈরাচার যদি না মানে সেটি তার দায়িত্ব। জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে বলাটা আমার দায়িত্ব। আমি বলেছি, এর মাধ্যমে এই সরকারকে আমরা পরীক্ষা করে দেখব ২০২৩ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তারা কতটুকু নিরপেক্ষতা বজায় রাখেন। যদি নিরপেক্ষতা দেখাতে না পারে তাহলে জাতীয় নির্বাচনে এই ভোট চুরি-ডাকাতির প্রভাব তো পড়বেই।
ঢাকা পোস্ট : দুটি সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা নৌকার পক্ষ হয়ে ভোটারদের টাকা দিচ্ছে এমন অভিযোগ করেছেন। এতে আপনার নির্বাচনে কতটা প্রভাব পড়ছে?
ইকবাল হোসেন তাপস : প্রভাব পড়ছে বলেই আমি অভিযোগগুলো তুলছি। গণমাধ্যমের মাধ্যমে সরকারকে জানানোর চেষ্টা করছি। গোয়েন্দাদের এই তৎপরতায় জনগণ মারাত্মক রকমের ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। নির্বাচন কমিশন যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বলেছে তা তারাই নষ্ট করে দিয়েছে। বরিশালে প্রার্থী বা প্রার্থীর সমর্থকরা কোনো মারামারি করেনি। বরিশালের মানুষ শান্তিপ্রিয়। কিন্তু নির্বাচন কমিশন ও সরকার নিরপেক্ষ নির্বাচনে আন্তরিক নয়। তারপরও আমি মনে করছি, নৌকার পক্ষে যে প্রভাবিত করা হয়েছে তা স্থানীয় প্রশাসন করেছে। আমি সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার হেডকোয়ার্টারের প্রধানের কাছে অনুরোধ করবো, আপনারা এই তৎপরতা বন্ধ করেন।
ঢাকা পোস্ট : নির্বাচিত হতে পারলে প্রথম কোন কাজটি করবেন?
ইকবাল হোসেন তাপস : নির্বাচিত হতে পারলে বরিশাল শহরকে প্রথমেই একটি উৎপাদনমুখী শহর হিসেবে গড়ে তোলার কাজে হাত দেব। বরিশাল শহরকে ডিজিটাল শহর করার জন্য তথ্যপ্রযুক্তিখাতে অগ্রাধিকার দিতে চাই।
প্রসঙ্গত, আগামীকাল সোমবার বরিশাল সিটি নির্বাচন। এই নির্বাচনে ৩০টি ওয়ার্ডে ১২৬টি কেন্দ্রের ৮৯৪টি কক্ষে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। মোট ভোটার ২ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮০৯ জন এবং পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৮৯ জন। ভোট পর্যবেক্ষণে ১ হাজার ১৪৬টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।
ভোটে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে চার হাজার ৪০০ পুলিশ, আনসার, এপিবিএন, র্যাব দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়া ১০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। একইসঙ্গে ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবেন।
নির্বাচনে সাত মেয়র প্রার্থীসহ মোট ১৬৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এমজেইউ