কিং, জ্যাকোবিন, সোয়া চন্দন, লক্ষা, সিরাজী, গোল্ডেন সুইট এসব নজরকাড়া নাম আর বাহারি রঙের কবুতরের হাট বসে খালিশপুরের নয়াবাটিতে। কবুতরগুলো দেখতে যেমন সুন্দর, নামও তেমন চমৎকার।

শুক্রবার ছুটির দিন এলেই পাখিপ্রেমিদের মিলনমেলা হয় খুলনার সবচেয়ে বড় কবুতরের হাটে। বেলা বাড়তেই এসব কবুতরের টানে দূর-দুরান্ত থেকে ছুটে আসে হাজার হাজার পাখিপ্রেমি।

খুলনা মহানগরীর খালিশপুর নয়াবাটি মোড় থেকে গোলচত্বর পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশজুড়ে বিক্রেতারা সারিবদ্ধভাবে খাঁচায় কবুতর বেচা-কেনা করেন। এ হাটে শুধু কবুতরই নয়, ঘুঘু, টিয়া, ময়না, টার্কিসহ দেশি-বিদেশি পোষা পাখিও বিক্রি হয়। আছে খরগোশও। বিক্রি করা হয় পাখির খাঁচাও।

এ হাটে ময়মনসিংহ, কুষ্টিয়া, যশোর, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ঢাকা, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পোষা পাখির ক্রেতা-বিক্রেতারা আসেন। নগরীর গল্লামারী ও ফুলবাড়ি গেটসহ কয়েকটি বাজারে কবুতর উঠলেও সবচেয়ে বড় ও জনপ্রিয় খুলনার এ হাট।

খালিশপুর নয়াবাটি হাটের কবুতর বিক্রেতা মো. ফরহাদ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতি শুক্রবার কবুতরের হাট বসে। এ হাটে লক্ষা, সিরাজী, হোমার, হাউস পেজার, কোটাবলসহ বিভিন্ন জাতের কবুতর ওঠে। কবুতরের জাতভেদে বিভিন্ন দাম ওঠে। ৩ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকার কবুতরও পাওয়া যায়। ধনী ব্যক্তিরা বেশিরভাগ ফেন্সি নামের কবুতর লালন-পালন করে।

হাটের আরেক কবুতর বিক্রেতা সাজ্জাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, তার কাছে লক্ষা, কিং, লাহোড়ি, শর্টপিচ, ফিলব্যাক, রাশিয়ার ভোগলা ডামলা, পোটার, বল কবুতর, পেন্সিল পুটার, রেসার হুমারসহ বিভিন্ন ধরনের কবুতর রয়েছে। এখানে ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা মূল্যের কবুতর রয়েছে। এসব কবুতর বিত্তশালী ও সৌখিন মানুষরা পোষেন।

তিনি বলেন, হাটে কবুতরের পাশাপাশি টার্কি মুরগি, খরগোশ, হাঁস, বিদেশি পাখিসহ বিভিন্ন প্রজাতির পশু-পাখিও পাওয়া যায়।

শেরপুর জেলা থেকে খুলনার কবুতরের হাটে এসেছেন মো. আমীর আলী নামের এক ব্যবসায়ী। তিনি এসেছেন কবুতর কিনতে। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় আমীর আলীর।

তিনি বলেন, কবুতর কেনার উদ্দেশ্যে খুলনায় এসেছি। এখান থেকে ৭০ থেকে ৮০টি কবুতর কেনার টার্গেট রয়েছে। এখন পর্যন্ত ৬০টি কবুতর কেনা হয়েছে। বাড়িতে একটি কবুতরের খামার রয়েছে সেখানে এসব কবুতর ছেড়ে দেব। এছাড়া যারা কবুতর পোষে তাদের কাছে বিক্রি করব।

তিনি আরও বলেন, খুলনা ছাড়াও কুষ্টিয়ার মিরপুর ও ভেড়ামারা থেকে কবুতর কিনে থাকি। গিরিবাজ কবুতরের চাহিদা বেশি । দাম ৫শ' থেকে ৮শ' টাকা জোড়া। কবুতর বেচা-কেনা করে মাসে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা আয় হয় বলে তিনি জানিয়েছেন।

কুষ্টিয়া থেকে খালিশপুর নয়াবাটি পাখির হাটে আসা আব্দুল আলিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, কবুতর কেনার জন্য কুষ্টিয়া থেকে এসেছি। বিভিন্ন প্রজাতির ৩০টি কবুতর কিনেছি। এখান থেকে কবুতর কিনে বিক্রি করি। চার-পাঁচ বছর ধরে এ ব্যবসা করছি। এটি ভালো ব্যবসা।

খুলনার সাচিবুনিয়ার সৌখিন কবুতর ব্যবসায়ী আসাদুল বলেন, হাটে এসেছি কবুতর দেখতে। যদি পছন্দ হয় তাহলে কিনব। কিংসহ নানা প্রজাতির কবুতর পছন্দ তার।

তিনি বলেন, আগে শখে কবুতর পুষতাম, এখন ব্যবসা হয়ে গেছে। আমি প্রথমে একজোড়া সিরাজী কবুতর দিয়ে শুরু করি। এখন বিভিন্ন প্রজাতির কবুতর রয়েছে। তিনি বলেন, জাতের প্রকারভেদে কিং কবুতরের জোড়া ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।

এমআইএইচ