গরুতে ভরপুর হাট, ক্রেতা বেশি দেশি ষাঁড়ের
নতুনহাটের পুরো এলাকায় শুধু গরু আর গরু। ছোট-বড় আর মাঝারি সাইজের গরুতে ভরপুর হাটটি। ক্রেতা-বিক্রেতা আর ব্যাপারীরা সরগরম হয়ে উঠেছে। হাটের কোথাও একটু সময় দাঁড়িয়ে থাকার জায়গা পাওয়া দুষ্কর। হাটে দেশি গরুর পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক সাদা জাতের ইন্ডিয়ান বোল্ডার গরুও এসেছে।
কোরবানির পশু বেচাকেনা উপলক্ষ্যে এমন হাট বসেছে জয়পুরহাট জেলা শহরের নতুনহাট এলাকায়। জেলার মধ্যে গরু বেচাকেনার দিক থেকে এই হাটের অবস্থান প্রথম। সপ্তাহে প্রতি শনিবার এখানে গরুর হাট বসে। তবে কোরবানি উপলক্ষ্যে বুধবার ও শনিবার দুদিন হাট বসবে।
বিজ্ঞাপন
শনিবার (১৭ জুন) দুপুরে হাটে গিয়ে দেখা গেছে, গোহাটির পুরো মাঠ গরুতে ভরে গেছে। জায়গা কমের কারণে হাটের রাস্তায়ও বেঁধে রাখা হয়েছে গরু। হাটের উত্তর দিকে কোণায় সাদা জাতের ইন্ডিয়ান বোল্ডার গরু রাখা। গো-হাটির পশ্চিম-দক্ষিণ পাশে রাস্তায় ছোট, মাঝারি ও বড় সাইজের গরু রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
হাটে আগত গরুর ক্রেতা-বিক্রেতারা ও ব্যাপারীরা জানান, এবার গরুর আমদানি বেশি হয়েছে। তবে তুলনামূলক ক্রেতা কম। মাঝারি ও বড় দেশি ষাঁড় কিনতে ক্রেতারা ভিড় জমাচ্ছেন। ৮০ হাজার থেকে এক লাখ ২০ হাজারের মধ্যে মাঝারি সাইজের গরুর ক্রেতা বেশি। হাটে অতিরিক্ত টোল আদায় করা হচ্ছে। টোল হিসেবে প্রতিটি গরু ক্রেতার কাছ থেকে ৬০০ টাকা এবং বিক্রেতার কাছ থেকে ৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।
নওগাঁর সাপাহার গোয়ালা এলাকার আব্দুস সালাম বলেন, মাঝারি সাইজের তিনটি ষাঁড় হাটে এনেছি। এরমধ্যে এক লাখ এক হাজার টাকায় একটি বিক্রি করেছি। অন্য দুটি ষাঁড় ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা করে চেয়েছি। ব্যাপারীরা ১ লাখ ৫ হাজার টাকা বলেছে। এই দামে বিক্রি করলে দুটি গরুতে আমার ১০ হাজার টাকা লোকসান হবে। হাটে প্রচুর গরু আমদানি হয়েছে। তবে সে তুলনায় বিক্রি কম হচ্ছে।
ইন্ডিয়ান বোল্ডার জাতের গরু বাড়িতে লালন-পালন করেছেন বিরামপুর শান্তির মোড়ের আমিনুর রহমান। গরুগুলো বিক্রি করতে হাটে এনেছেন। তিনি বলেন, আমি চারটি সাদা জাতের ইন্ডিয়ান বোল্ডার গরু হাটে বিক্রি করতে এনেছি। চারটি গরুর দাম সাড়ে ১৭ লাখ টাকা চেয়েছি। ব্যাপরীরা ১৩ লাখ টাকা দাম বলেছে। আমি ১৪ লাখ টাকা হলে বিক্রি করব।
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার বাসিন্দা সোলায়মান আলী বলেন, আমি এক জোড়া শাহীওয়াল জাতের বড় গরু এনেছি। ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা দাম চেয়েছি। ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা দাম বলেছে। ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা হলে ছেড়ে দেব।
শরীয়তপুর জেলার ব্যাপারী আসলাম হোসেন বলেন, আট জোড়া বড় সাইজের গরু কিনেছি। প্রতি জোড়া গরু আড়াই লাখ টাকার ওপর পড়েছে। ঢাকায় কোরবানি পশুর হাটে গরুগুলো বিক্রি করব।
নওগাঁর ধামইরহাটের উব নারায়ণপুর গ্রামের আফাজ উদ্দিন বলেন, ছোট সাইজের তিনটি বকনা গরু এনেছিলাম। তিনটা গরুই বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে একটি গরু ৮০ হাজার টাকা, অন্য দুটি ৬৫ হাজার টাকা করে বিক্রি হয়েছে। ইজারাদারের লোকজন তিনটি গরুতে আমার কাছ থেকে লিখনির জন্য দেড়শ টাকা নিয়েছে। গরুর ক্রেতার কাছে ১ হাজার ৮০০ টাকা নিয়েছে।
ইজারাদারের টোল আদায়কারী মৃদুল বলেন, আমরা প্রতিটি গরু ৬০০ টাকা আর লিখনি বাবদ বিক্রেতার কাছে ৫০ টাকা করে নিচ্ছি। ইজারাদার আমাদের নির্দেশনার বাইরে টোল আদায় করছি না।
জয়পুরহাটের নতুনহাট গোহাটির ইজারাদার কালীচরণ আগরওয়ালকে টোল আদায় ঘরে গিয়ে পাওয়া যায়নি। অলিদ হোসেন নামে একব্যক্তি নিজেকে হাট পরিচলক পরিচয় দিয়ে জানান, প্রতিটি গরুর সাড়ে পাঁচশ টাকা করে টোল নেওয়া হচ্ছে। যারা টোলের রসিদ লিখছেন তারা ৫০ করে নিচ্ছেন। সরকারি রেইটের বাইরে টোল আদায় করা হচ্ছে না।
তিনি বলেন, এবার প্রচুর গরু আমদানি হয়েছে। বড় সাইজের ও মাঝারি সাইজের গরুর চাহিদা বেশি। তবে গতবারের তুলুনায় এবার কোরবানির হাটে কম পশু বেচাকেনা হচ্ছে। ইন্ডিয়ান সাদা জাতের গরু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইন্ডিয়ান গরুগুলো গৃহস্থরা অনেক আগে থেকে বাড়িতে লালন-পালন করেছিলেন। সেই গরুগুলো বিক্রির জন্য এনেছেন। গরুগুলো সরাসরি ইন্ডিয়া থেকে আসেনি।
জয়পুরহাট পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নূরে আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, গরু বেচাকেনার জন্য কোরবানি পশুরহাটে গাড়ি ভালোভাবে প্রবেশ করতে পারে। শহরে বা রাস্তায় যেন যানজট না লাগে সেজন্য পুলিশের সার্বিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। হাটে ছিনতাই যেন না হয় এবং নির্বিঘ্নে পশু বেচাকেনা হয় এজন্য পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তাছাড়া পশু বিক্রির টাকা বিক্রেতারা বাড়িতে নিতে পারে সে ব্যাপারেও আমরা সজাগ রয়েছি।
আরকে