দীর্ঘদিনের খরা ও অনাবৃষ্টি কাটিয়ে ভারী বর্ষণ শুরু হয়েছে সুনামগঞ্জে। বৃষ্টির পানি আর ভারতের পাহাড়ি ঢলের জলে পরিপূর্ণতা পাচ্ছে হাওর। হাওর এলাকার খাল-বিল ও কৃষিজমিগুলোতে ধীরে ধীরে প্রবেশ করছে নতুন পানি। আর ওই পানিতে ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে আয়োজন করে মাছ ধরছেন পেশাজীবী ও মৌসুমি জেলেরা।

বিশ্বম্ভপুর উপজেলার করচার হাওর ঘুরে দেখা যায়, সড়কের পাশে একটু পর পর চিফ জাল পুঁতে রাখা হয়েছে। কেউ সেটা দিয়ে মাছ ধরতে ব্যস্ত, কেউবা চিফজাল বাঁধতে ব্যস্ত। আবার হাঁটু সমান পানিতে নেমে ঠেলা জাল ঠেলে যাচ্ছেন অনেকে। কেউ পানি ঢোকার জায়গায় স্রোতের পাশ থেকে দূরে উড়িয়ে দিচ্ছেন জাল। এসব জালে দেশী মাছ বেশি ধরা পড়ছে। ট্যাংরা, চান্দা, পুঁটি, চিংড়ি, বাতাসী মাছ পাওয়া যাচ্ছে এসব জালে। কয়েক দিন আগেও যে হাওরে গরু ঘাস খেয়েছে সেই হাওরে ঘুরে বেড়াচ্ছে জেলেদের ছোট ছোট নৌকা। মাছ ধরা শেষ করে ঘাটে এসে নৌকা ভিড়িয়ে বিক্রি করছেন বাজারে। তবে প্রথম পানি হওয়ায় আশানুরূপ মাছ পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান জেলেরা। বেশি করে মাছ ধরা পড়তে আরও কয়েক দিন লাগবে।

দিনের পাশাপাশি অনেকে রাতের আঁধারেও কুঁচা দিয়ে মাছ শিকার করছেন। কোঁচা দিয়ে সাধারণত শিং, ট্যাংরা, কই, মাগুর, চেঙ, শোলসহ বড় আকারের মাছ ধরা পড়ে।

পৌর শহরের বড়পাড়ার ইসমাইল আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘রাতে মেঘের পর ঠাডা পড়লে (বজ্রপাত) মাছ সড়কের কাছে চলে আসে। তখন হাত দিয়েই মাছ ধরা যায়। আমি সড়কে এক কুড়ির মতো কই মাছ ধরেছি।’

বিশ্বম্ভপুর উপজেলার চালবন গ্রামের নবী হোসেন ঢাকা পোস্টকে জানান, তিনি মৌসুমি জেলে। নিজে খাওয়ার জন্য মাছ ধরেন। আজকে প্রথম এসেছেন মাছ ধরতে। এর আগে হাওরে পানি ছিল না। তাই মাছ ধরতে পারেননি। নতুন পানি এসেছে। তবে এখনও তুলনামূলক কম মাছ পাওয়া যাচ্ছে। তার সঙ্গে এসেছে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে আরাফাত।

বিশ্বম্ভপুর উপজেলার মুক্তিখলা গ্রামের পেশাজীবী মাছ বিক্রেতা আব্দুল মজিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, নতুন পানি আসায় নতুন মাছ পাওয়া যাচ্ছে। দেশি-বিদেশি সব জাতের মাছ আসছে। পানি হওয়ায় দেশি মাছ আগের থেকে কিছুটা বেশি পাওয়ায় দাম কিছুটা কমেছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শামশুল করিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, মাছ ধরার সময় জেলেদের খেয়াল রাখতে হবে যেন ডিমওয়ালা মা মাছ এবং ছোট ছোট পোনা না ধরেন। অবৈধ যেসব জাল রয়েছে সেগুলো ব্যবহার না করা হয়। ক্রেতারাও যেন মা মাছ এবং পোনা মাছ ক্রয় না করেন। মাছের বংশ বৃদ্ধিতে সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে। এরপরও কেউ ব্যত্যয় ঘটালে আমরা অভিযান চালিয়ে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

সোহানুর রহমান সোহান/এমজেইউ