খুলনার আলোচিত শিশু অঙ্কিতা দে ছোঁয়া হত্যা মামলায় প্রীতম কুমার রুদ্র নামে একজনের যাবজ্জীবনের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে এক বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মরদেহ গুমের অপরাধে ৫ বছরের কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন। 

বুধবার (২১ জুন) বেলা ১১টার দিকে খুলনা দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মতিউর রহমান এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। 

বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ রায়ে আমরা খুশি নই। রায়ের কপি পাওয়ার পর উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে। আশা করছি উচ্চ আদালতে আসামির সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে।

এর আগে ১৩ জুন আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষণার জন্য আদালত আজকে রায়ের দিন নির্ধারণ করেন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ২২ জানুয়ারি দুপুর ১২টার দিকে দৌলতপুর থানার পাবলা বণিক পাড়ার মৌচাক টাওয়ারের সামনে থেকে অঙ্কিতা দে ছোয়া হারিয়ে যায়। এসময় তার পরনে ছিল গোলাপি রঙের সোয়েটার। সে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও পোস্ট দেওয়া হয়। তবে তার কোনো সন্ধান মেলেনি। ২৮ জানুয়ারি বাথরুম থেকে তার বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

এর আগে এ ঘটনায় স্কুলছাত্রী অঙ্কিতার বাবা সুশান্ত কুমার দে থানায় সাধারণ ডায়েরি ও পরবর্তীতে মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় পুলিশ জাহাঙ্গীর ও তার স্ত্রী রিক্তাকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। কিন্তু তাদের কাছ থেকে কোনো তথ্য না পেয়ে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করে। পরে অঙ্কিতা দের হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করে পুলিশ। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে পুলিশ পরে পাবলা বণিকপাড়া এলাকার বিনাপানি ভবনের মালিকের ছেলে প্রীতম কুমার রুদ্রকে গ্রেপ্তার করে। পরে রহস্যের জট খুলতে শুরু করে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডে নিজের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। পরে আদালতে ১৬৪ ধারায় নিজের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়।

সেখানে প্রীতম রুদ্র স্বীকাররোক্তিতে জানান, ২০২১ সালের ২২ জানুয়ারি সাড়ে ১২টার দিকে মৌচাক টাওয়ারের পাশে অঙ্কিতাকে খেলতে দেখি। পরে তাকে কম্বল দেওয়ার কথা বলে ছাদে নেই। এরপর চিলেকোটার ঘরের সামনে নিয়ে অঙ্কিতার শরীর স্পর্শ করলে সে চিৎকার করে ওঠে। তখন ধাক্কা দিলে দেওয়ালের সঙ্গে আঘাত পেয়ে শিশুটি জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তাকে ধর্ষণ করে প্রীতম। এরপর কাপড় ও শুকনো দড়ি দিয়ে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। মরদেহটি গুম করার জন্য একটি বস্তা জোগাড় করে নিচ তলার গ্যারেজের পাশে বেসিনের নিচে লুকিয়ে রাখা হয়। পরবর্তীতে গন্ধ বের হলে তার মামা স্যানেটারি মিস্ত্রি ডেকে থেকে মালপত্র আনতে গেলে বাথরুমে রাখা বস্তাটি দেখে তার বাবাকে খবর দেয়।

২০২১ সালে ৩০ জানুয়ারি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আহমেদ উল্লিখিত জবানবন্দি রেকর্ড করেন। একই বছরের ১৩ এপ্রিল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই মিজানুর রহমান প্রীতম রুদ্রকে আসামি করে আদালতে অভিযোগ পত্র দাখিল করেন।

মোহাম্মদ মিলন/আরকে