ডাক্তার না হয়েও রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক দিচ্ছেন তারা
ডাক্তার না হয়েও অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ লিখে দেন রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির পল্লি চিকিৎসকরা। যার ফলে বাজারে যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক। রোগীর সমস্যা বলার সঙ্গে সঙ্গে ৪-৫ প্রকারের ওষুধসহ অ্যান্টিবায়োটিকের প্রেসক্রিপশন ধরিয়ে দিচ্ছেন তারা। ফলে মারাত্বক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে এ অঞ্চলের প্রায় আড়াই লাখ সাধারণ মানুষ।
পল্লি চিকিৎসকদের এই প্রেসক্রিপশন লেখার বিষয়ে একেবারেই নজরদারি নেই স্বাস্থ্য প্রশাসনের। যার কারণে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে এলাকার এসব অদক্ষ নামমাত্র চিকিৎসকরা।
বিজ্ঞাপন
বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ২৭ জন নিবন্ধিত চিকিৎসক এবং প্রায় ১৫০ পল্লি চিকিৎসক রয়েছেন। এর মধ্যে দন্ত চিকিৎসক রয়েছেন ১৩ জন। তারা সবাই নিয়মিত চেম্বার খুলে সকাল থেকে রাত অবধি রোগী দেখেন। অন্যদিকে ২৭ জন নিবন্ধিত চিকিৎসকের মধ্যে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত রয়েছেন ১৭ জন।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, বালিয়াকান্দি বাজারে রতন কুমার অধিকারী, নারায়ণ চন্দ্র রায়, নিল কোমল দেবনাথ, গৌতম কুমার কর্মকার, মনিদ্রনাথ মজুমদারসহ কয়েকটি দন্ত প্র্যাকটিশনার নিয়মিত রোগী দেখছেন এবং প্রেসক্রিপশন করে দিচ্ছেন। প্রতিটি রোগীকেই প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক লিখে দিচ্ছেন তারা।
বিজ্ঞাপন
পল্লি চিকিৎসকরা প্রেসক্রিপশনে অ্যান্টিবায়োটিক লিখতে পারেন কিনা এমন প্রশ্ন করলে রতন কুমার অধিকারি ও নিল কোমল দেবনাথ নিজেদের ভুল স্বীকার করে বলেন, অ্যান্টিবায়োটিক লেখা আমাদের উচিত না। তবে রোগীর অবস্থা বুঝে আমরা কিছু কম মাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক লেখি। এরপর থেকে আর লেখব না। তবে সরকার আমাদের বিষয়ে একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত দিক। কারণ আমাদের কাছে যে সকল রোগী আসে তার বেশিরভাগই দরিদ্র।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নাসির উদ্দিন বলেন, অ্যান্টিবায়োটিক অযথা বা অকারণে ব্যবহারের ফলে জীবাণু এখন নিজেই প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। যার কারণে মানুষের মৃত্যু ঝুঁকিও বাড়াচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক। কোনোভাবেই পল্লি চিকিৎসকরা অ্যান্টিবায়োটিক লেখতে পারবেন না। উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান হিসাবে এটি দেখা দায়িত্ব আমার। এখন থেকে নিয়মিত বিষয়টি নিয়ে তদারকি করব।
রাজবাড়ী সিভিল সার্জন ডা. মো. ইব্রাহিম টিটন বলেন, উনারা তো নামের আগে ডাক্তার লেখতে পারবেন না। আর ডাক্তার না হলে তো কোনো প্রেসক্রিপশন করার সুযোগই নেই। অ্যান্টিবায়োটিক তো অনেক দূরের কথা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ডা. শাফিন জব্বার বলেন, বর্তমান সরকার মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করছেন। ইতোমধ্যে নিবন্ধিত চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ বিক্রি নিষিদ্ধ করে ‘ওষুধ ও প্রসাধনী আইন, ২০২৩’ এর খসড়ার চুড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছেন মন্ত্রিসভা। খসড়া আইন অনুযায়ী কোনো নিবন্ধিত চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ বিক্রি করা যাবে না এবং এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলেও গণ্য হবে।
মীর সামসুজ্জামান/আরকে