রাজবাড়ীতে কাঁচামরিচ ৬০০ টাকা কেজি
সর্বকালের রেকর্ড ভেঙে কাঁচা মরিচের দাম এখন আকাশ ছোঁয়া। রাজবাড়ীর বিভিন্ন বাজারে কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা কেজি দরে। ঈদের আগেও যেই কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে।
বেশ কিছুদিন ধরেই লাগামহীন দেশের কাঁচা মরিচের বাজার। বাজার নিয়ন্ত্রণে গত ২৫ জুন সরকার কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি দেয়। তবুও কমছে না মরিচের দাম।
বিজ্ঞাপন
তবে বিক্রেতাদের দাবি, বৃষ্টি ও পরিবহন সংকটে কমে গেছে মরিচের সরবরাহ। তাই দাম ঊর্ধ্বমুখী। শনিবার (১ জুলাই) সকালে রাজবাড়ী জেলা শহরের শ্রীপুর বাজার, নতুন বাজার, বড় বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি সবজির দোকানে কাঁচা মরিচ খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে। পাইকারী বাজারে আড়তদাররা খুচরা ব্যবসায়ীদের কাঁচা মরিচ বিক্রি করছে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি দরে।
এছাড়াও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলা, পাংশা উপজেলা, বালিয়াকান্দি উপজেলা ও কালুখালি উপজেলার বিভিন্ন বাজারে একই দামে বিক্রি হচ্ছে কাঁচা মরিচ।
বিজ্ঞাপন
জেলা শহরের শ্রীপুর বাজারে কাঁচা মরিচ কিনতে আসা ক্রেতা সজিব মন্ডল জানান, ২০ টাকার কাঁচা মরিচ কিনতে এসেছিলাম। কিন্তু দোকানদার দিলো না। কাঁচা মরিচ ৬০০ টাকা কেজি তাই সে ২০ টাকার কাঁচা মরিচ দিলো না। এখন আমি মরিচ না নিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।
বড় বাজারে মরিচ কিনতে আসা ক্রেতা শেফলী বেগম বলেন, মরিচ তরকারি রান্নার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। মরিচ ছাড়া তরকারি রান্না করলে সেই তরকারি স্বাদ হবে না। কিন্তু যেভাবে মরিচের দাম বাড়ছে মধ্যবিত্তদের জন্য মরিচ কেনাটাই কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
বালিয়াকান্দিতে বসবাসরত সাংবাদিক দেবাশীষ বিশ্বাস জানান, তাদের জামালপুরসহ স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ৫৫০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ঈদের আগেও যা ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। কাঁচা মরিচের দামের এই ঊর্ধ্বগতির জন্য তিনি সিন্ডিকেটকেই দায়ী করেছেন এবং সরকারের এই বিষয়ে আরও নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানান।
একাধিক বিক্রেতারা জানান, বেশ কয়েকদিন ধরেই ঊর্ধ্বমুখী কাঁচা মরিচের বাজার। মূলত বর্ষাকাল হওয়ায় ও ঈদের কারণে সরবরাহ কম থাকায় দাম বাড়ছে কাঁচা মরিচের। এছাড়া পাইকারিতে কেজিতে দাম পড়ছে ৫৫০ টাকার ওপরে। এই জন্য খুচরা বাজারে দাম বেড়েছে।
রাজবাড়ী বড় বাজারের আলাউদ্দিন শেখ নামের এক কাঁচা মরিচ বিক্রেতা জানান, বর্ষা মৌসুম হওয়ায় উত্তরবঙ্গসহ কয়েকটি জায়গায় মরিচ খেত তলিয়ে গেছে। এছাড়া কোরবানির কারণে বেশিরভাগ ট্রাক পশু পরিবহনে ব্যস্ত ছিল। ফলে স্থানীয় বাজারগুলোতে কাঁচা মরিচের সরবরাহ তেমন হয়নি। ফলে দাম বেড়েছে।
কাঁচা মরিচের এই ঊর্ধ্বমুখী দাম নিয়ন্ত্রণে এখনই লাগাম টেনে ধরার আহ্বান জানিয়েছে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই। ক্রেতারা বলছেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয় না। এতে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পায়।
আর বিক্রেতারা বলেন, সরবরাহ কম থাকার পাশাপাশি কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছে করেও দাম বাড়াচ্ছে। বাজারে নিয়মিত অভিযান চালালে অসাধুদের দৌরাত্ম্য কমবে। এছাড়া ভারত থেকে আমদানি অব্যাহত থাকলে। দাম কমে আসবে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রাজবাড়ী জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক কাজী রকিবুল হাসান বলেন, উত্তরবঙ্গসহ কয়েকটি জেলায় অতিবৃষ্টির কারণে কাঁচা মরিচের উৎপাদন কমে গেছে। এছাড়া কোরবানির ঈদের কারণে পরিবহন সংকটে স্থানীয় বাজরে কাঁচা মরিচের সরবরাহ কমে যায়। ফলে বাজারগুলোতে মরিচের দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়। সরকার ভারত থেকে মরিচ আমদানি শুরু করেছে। ঈদের কারণে বন্দরগুলো বন্ধ থাকায় কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। তবে আশা করছি দুই/তিন দিনের মধ্যে ভারত থেকে আমদানিকৃত মরিচ বাংলাদেশে ঢুকলে মরিচের দাম কমে যাবে। এছাড়া আমাদের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এ বিষয়ে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করবে।
মীর সামসুজ্জামান/আরকে