ধরাছোঁয়ার বাইরে ছয় মামলায় সাজাপ্রাপ্ত কাউন্সিলর
আব্দুল্লাহ আল ফারুক
ছয়টি মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে জামালপুরের মেলান্দহ পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের সদ্য বহিষ্কৃত কাউন্সিলর আব্দুল্লাহ আল ফারুক।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আব্দুল্লাহ আল ফারুক শাহজাদপুর এলাকায় ‘ভাই-ভাই ব্রিকস’ নামে একটি ইটভাটার কার্যক্রম শুরু করেছিলেন। ২০২০ সালে সেই ইটভাটা দেখিয়ে এবং ইট বিক্রির কথা বলে বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে অগ্রিম প্রায় ৪ কোটি টাকা নেন। পরবর্তীতে কাউকে ইট এবং টাকা ফেরত দিতে পারেননি। ২০২১ সালের এপ্রিলে শাজাহান নামের একজনকে ১১ লাখ ২৫ হাজার টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে ফারুক একটি চেক দেন। কিন্তু ব্যাংকে চেকটি জমা দিলে ফারুকের অ্যাকাউন্টে টাকা না থাকায় চেকটি ডিসঅনার হয়। এ সময় আরও কয়েকজন ভুক্তভোগীকেও চেক দিয়েছিলেন আব্দুল্লাহ আল ফারুক, সেগুলোও ডিসঅনার হয়।
বিজ্ঞাপন
পরে আত্মগোপনে চলে যান আব্দুল্লাহ আল ফারুক। এ ঘটনায় সাতজন ভুক্তভোগী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণাসহ চেক জালিয়াতির সাতটি মামলা দায়ের করেন। এর মধ্যে ছয়টি মামলার রায় হয়েছে।
মামলার নথিপত্র পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, শাজাহান নামের এক ভুক্তভোগীর দায়ের করা মামলায় আব্দুল্লাহ আল ফারুককে আট মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড করা হয়। জামালপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত গত বছরের ১৭ অক্টোবর এ রায় দেন।
বিজ্ঞাপন
এছাড়া ভুক্তভোগী নাজমুল, সাদুজ্জামান, সুলতান, রবিউল ইসলাম, রেজাউল ইসলামের দায়েরকৃত মামলায় আব্দুল্লাহ আল ফারুককে এক বছর, ছয় মাস, সাত মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড করেন আদালত।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, আব্দুল্লাহ আল ফারুকের নামে মেলান্দহ থানায় সাত মাস আগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কাগজ এলেও পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তিনি ক্ষমতাসীন দলের লোক হওয়ায় তাকে গ্রেপ্তার করছে না পুলিশ। ফারুক ময়মনসিংহের একটি বাসায় বর্তমানে তার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আছেন।
ভুক্তভোগী আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, আমার টাকা ফেরত চাইলে ফারুক আমাকে চেক দেন। ব্যাংকে জমা দিলে চেকটি ডিসঅনার হয়। পরে আমি মামলা দায়ের করি। মামলার রায় হয়েছে। ফারুককে গ্রেপ্তারের জন্য আমরা পুলিশ সুপার, সহকারী পুলিশ সুপার (মাদারগঞ্জ সার্কেল) ও ওসির কাছে কয়েকবার গিয়েছি। কিন্তু এখনও ফারুক গ্রেপ্তার হচ্ছে না।
শাজাহান নামের আরেক ভুক্তভোগী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার দায়ের করা মামলায় আট মাসের জেল হয়েছে। ফারুককে দ্রুত গ্রেপ্তার করার জন্য আমরা পুলিশের বিভিন্ন অফিসে গিয়েছি, তাও কেউ গ্রেপ্তার করে না।
মেলান্দহ পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, একাধিক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় আব্দুল্লাহ আল ফারুককে গত ১৮ জুন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় অপসারণ করেছে এবং ওই ওয়ার্ডে উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ৩০ জুলাই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এ বিষয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (মাদারগঞ্জ সার্কেল) স্বজল কুমার সরকার বলেন, আমরা তাকে খুঁজছি। গ্রেপ্তার করার জন্য ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে।
এমজেইউ