লক্ষ্মীপুরে আওয়ামী লীগের লোকজন ও পুলিশ যৌথভাবে বিএনপির ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে গুলি করেছে বলে দাবি করেছেন বিএনপি নেতারা। 

তারা বলেন, হামলা চালিয়ে কৃষক দলের কর্মী সজিব হোসেনকে (৩২) কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের নেতাকর্মীদের পুলিশ নির্দয়ভাবে গুলি করেছে। দুইজনের চোখে গুলি লেগেছে। আমাদের প্রায় ২০০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হাসান মাহমুদ ইব্রাহিমকে ঢাকা পাঠানো হয়েছে। সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে আমাদের নেতাকর্মীরা চিকিৎসাধীন রয়েছে। সজিবকে হত্যার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হবে। যারা গুলিবিদ্ধ তাদের পক্ষ থেকেও মামলা করা হবে।

মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া ও বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা বলেন। বিএনপি নেতা এ্যানির লক্ষ্মীপুরের গোডাউন রোড এলাকার বাসভবনের সামনে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

এ সময় জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাহাব উদ্দিন সাবু ও যুগ্ম-আহ্বায়ক হাছিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। বিএনপি নেতা এ্যানির লক্ষ্মীপুরের গোডাউন রোড এলাকার বাসভবনের সামনে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

নিহত সজিব সদর উপজেলার চরশাহী ইউনিয়নের নুরুল্লাপুর গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে ও চরশাহী ইউনিয়ন কৃষক দলের সদস্য।

এর আগে বিকেল ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত শহরের মজুপুর, চকবাজার, কলেজ রোড ও কাচারিবাড়িসহ কয়েকটি স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যা ৬টার দিকে শহরের মদিন উল্যাহ হাউজিংয়ের একটি বাসার দোতলার সিঁড়ির পাশ থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় সজিবের মরদেহ উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ।

এদিকে এ ঘটনার পর থেকে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পুলিশ-র‌্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী টহল দিচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, দুপুর থেকেই জেলার বিভিন্ন পয়েন্টে আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বাধা সৃষ্টি করে। তবু বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে পূর্বনির্ধারিত সময়ে শহরের গোডাউন রোড এলাকা থেকে পদযাত্রা কর্মসূচি শুরু হয়। আদর্শ সামাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মোড়ে পদযাত্রার মাঝখানে কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে চোরাগোপ্তা হামলা চালানো হয়। ওই হামলা থেকেই কৃষক দল কর্মী সজিবকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এরপর লক্ষ্মীপুর-রামগতি সড়কের মজুপুর এলাকায় আধুনিক হাসপাতালের সামনে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের লোকজন যৌথভাবে পদযাত্রা কর্মসূচিতে বাধা দেয়। সেখানে পুলিশ গুলিও ছুঁড়েছে। এতে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ে নেতাকর্মীরা আহত হন। আহতরা সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অনেককে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ছোঁড়া ইটপাটকেল পুলিশের গায়ে পড়ে। আর পুলিশ তাদেরকে কিছু না করে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে জেলা বিএনপির আয়োজনে বিকেলে চকবাজার ব্রিজের দক্ষিণপাড়ে পদযাত্রা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এতে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন। একই সময় শহরের তেমুহনী থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শান্তি শোভাযাত্রা নিয়ে চকবাজার ব্রিজের উত্তরপাড়ে যান। এতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু নেতৃত্ব দেন। এ সময় মাঝে পুলিশ দুই পক্ষকে বাধা দেয়। একপর্যায়ে দুই পক্ষের নেতাকর্মীরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে মজুপুর ডিবি রোড এলাকায়,  ঝুমুর ও মাদাম এলাকায় ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। এতে শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন।

সদর থানা সূত্র জানায়, সংঘর্ষে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো.  সোহেল রানা, সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোসলেহ উদ্দিন, রামগতি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মইনুল হকসহ ১৬ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। 

সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, এক যুবককে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এছাড়া ১৬ পুলিশ এবং দুই দলের ৫০ জন নেতাকর্মী চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের হাত-পাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা প্রথমে হামলা ও ভাঙচুর করেছে। তারা বৃষ্টির মতো ইট মেরেছে, ফাঁকা গুলিও করেছে। এতে আমাদের কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হন। তাদের একজন কীভাবে মারা গেছে তা আমরা বলতে পারবো না।

লক্ষ্মীপুরের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ বলেন, বিএনপির উত্তেজিত নেতাকর্মীরা প্রথমে লাঠিসোঁঠা নিয়ে হামলা চালিয়েছে। তারা অতর্কিতভাবে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে হামলা, ভাঙচুর চালায়। তারা হাইওয়ের দিকে ওঠার চেষ্টা করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আমরা লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করি। তাদের হামলায় পুলিশের ২৫-৩০ জন সদস্য আহত হন। একজন কীভাবে মারা গেছে তা এখনো নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।

হাসান মাহমুদ শাকিল/আরএআর