আকর্ষণীয় বেতনে ভালো হাসপাতালে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ৬ মাসের নার্সিং কোর্সে ভর্তি করানো হয় শিক্ষার্থীদের। অথচ দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও শিক্ষার্থীদের চাকরি দেওয়া তো দূরের কথা শর্ত অনুযায়ী ইন্টার্নশিপও করানো হয়নি। দেওয়া হয়নি মূল সনদও।

এ অবস্থায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ। প্রতিকার চেয়ে রাজবাড়ীর মেডিকেয়ার হেলথ এন্ড টেকনিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রাজবাড়ী পৌরসভার সজ্জনকান্দা জমিদার সড়কের একটি ৬ তলা বিল্ডিং এর চতুর্থ তলা ভাড়া নিয়ে মেডিকেয়ার হেলথ এন্ড টেকনিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট তাদের অফিস কার্যক্রম পরিচালনা করছে। প্রতিষ্ঠানটির রিসিপশনে একজন বসে রয়েছে। প্রত্যেক রুমে শিক্ষার্থীদের বসার জন্য চেয়ার টেবিল রয়েছে। একটা কক্ষে কিছু শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া হচ্ছে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী অনন্যা আক্তার বলেন, ‌আমি ২০২২ সালের মার্চ মাসে কেয়ার গিভিং (সহকারী নার্সিং) কোর্স করার জন্য রাজবাড়ীর মেডিকেয়ার হেলথ এন্ড টেকনিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে ৮০ হাজার টাকা দিয়ে ভর্তি হই। এছাড়া ছয় মাসের এ কোর্সে প্রতি মাসে আরও সাত হাজার টাকা করে দিই। ভর্তির সময় প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ শাহরিয়ার রিয়াজ বলেছিলেন, ছয় মাসের কোর্সে তিন মাস জেলা সদর হাসপাতালে ইন্টার্নশিপ করানোর পর আমাকে ভালো প্রতিষ্ঠানে আকর্ষণীয় বেতনে চাকরির ব্যবস্থা করে দিবেন। অথচ চাকরি তো দূরের কথা, দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও আমাকে এখন পর্যন্ত ইন্টার্নশিপই করানো হয়নি। তৃতীয় লেভেলের পরীক্ষা শেষ হয়েছে পাঁচ মাস আগে, অথচ এখনো মূল সনদও দেয়া হয়নি। এ অবস্থায় আমার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আমার মতো ৪০ জন শিক্ষার্থী এমন পরিস্থিতিতে রয়েছে। প্রতিকার চেয়ে গত ২৫শে জুন আমরা কয়েকজন শিক্ষার্থী জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি।

আরেক শিক্ষার্থী তৃষা আক্তার মীম বলেন, ৬ মাসের কোর্স করতে এসে দেড় বছর পার করে ফেললাম। গত ফেব্রুয়ারি মাসে আমাদের তৃতীয় লেভেলের পরীক্ষা শেষ হয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত মূল সনদ দেয়া হয়নি। চতুর্থ অর্থাৎ শেষ লেভেলের ক্লাস চলছে খুড়িয়ে খুড়িয়ে। এতো টাকা খরচ করে কোর্স করার পরেও কোনো ফল পাচ্ছি না। এখনো পর্যন্ত ইন্টার্নশিপও করতে পারলাম না। পরিবার থেকে নানান কথা শুনতে হচ্ছে। আমি চাই শর্ত অনুযায়ী আমাদের ইন্টার্নশিপ করাক, মূল সনদ প্রদান করুক এবং চাকরির ব্যবস্থা করে দিক। নাহলে এই দেড় বছর সময় ব্যয়ের ক্ষতিপূরণসহ আমাদের টাকা ফেরত দিক।

এ বিষয়ে মেডিকেয়ার হেলথ এন্ড টেকনিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ শাহরিয়ার রিয়াজ বলেন, আমরা সকল নিয়ম মেনে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছি। কিছু শিক্ষার্থী ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে মিথ্যা অভিযোগ করছে। দ্রুতই শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশিপ করানো হবে এবং মূল সনদ দেয়া হবে।

রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান বলেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য সিভিল সার্জনকে চিঠি দেয়া হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা পেলে ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম টিটন বলেন, প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে প্রতিষ্ঠানটির জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কোনো নিবন্ধন নেই। তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

মীর সামসুজ্জামান/এএএ