ফেনীতে ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে দ্বিগুণ, এখনও হয়নি পৃথক ওয়ার্ড
ফেনীতে চলতি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণ। তবে জেলায় ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় এখনও পৃথক ওয়ার্ড লক্ষ্য করা যায়নি। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সেবা গ্রহীতা ফেনী জেনারেল হাসপাতালে। যেখানে মেডিঁসিন ওয়ার্ডের রোগীদের সঙ্গে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১৩ জন রোগী। এ মাসে হাসপাতাল থেকে ৩৩ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। একই ওয়ার্ডে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা সেবা দেওয়ায় ভোগান্তিতে পড়ছেন রোগী ও স্বজনরা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, হাসপাতালে অন্যান্য রোগীর পাশে তৃতীয় তলায় পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় আলাদা কর্ণার করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বাস্তবচিত্র একদম ভিন্ন। হাসপাতালের তৃতীয় তলায় পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ড ইউনিট-৩ এ ২৬ শয্যার বিপরীতে ৭৯ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন। যেখানে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৯ জন। মেডিসিন বিভাগের মহিলা ওয়ার্ড-৪ এ একই পরিমাণ শয্যার বিপরীতে চিকিৎসাধীন রয়েছে ৯৮ জন। তার মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী রয়েছে ৪ জন। হাসপাতালে অতিরিক্ত রোগীর চাপে শয্যা না পেয়ে মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেকে। রোগীদের সঙ্গে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের অনেকেই মশারি টানাননি।
বিজ্ঞাপন
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ হতে প্রাপ্ত তথ্যমতে, জেলায় এখন পর্যন্ত মোট ১০৪ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। তার মধ্যে চলতি মাসেই আক্রান্ত হয়েছেন ৬৮ জন।
একই সূত্র আরও জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ফেনীর ছয় উপজেলায় ৫ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। বুধবার জেলায় ১২ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। যা জেলায় একদিনে শনাক্তের হারে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে সোমবার (১৭ জুলাই) রেকর্ড ১৯ জনের ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার তথ্য জানিয়েছিল জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
পরশুরামের সাতকুচিয়া এলাকার ইব্রাহীম নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, ঢাকা থেকে ছোট ভাই বাড়িতে আসার পর থেকে জ্বরে আক্রান্ত হয়। পরে পরীক্ষা করলে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য গেলে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে আসতে বলে। এখানে আজকে ৩ দিন ধরে মেঝেতে আছি। এমন অবস্থা মানুষ হাঁটলে পায়ের নিচে পড়তে হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
ছাগলনাইয়া উপজেলার শুভপুর থেকে আসা দীপংকর নামে একজন বলেন, আমরা গ্রামে থাকি। পরিবারের কেউ বাড়ির বাইরেও যায়নি। কিন্তু বাবাকে ডেঙ্গু উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। ছুটির দিন হওয়ার এখানে পরীক্ষা ছাড়াই পড়ে আছে। রোববার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। রোগী মারা গেলেও আমরা অসহায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক নার্স ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা চাইলেও অতিরিক্ত রোগীর চাপে ডেঙ্গু রোগীদের পৃথক ওয়ার্ডে সেবা দেওয়া সম্ভব হয়না। রোগীদের অনেকবার বলেও মশারি টানাতে কষ্ট হয়। বেশিকিছু বলতে গেলে অনেক রোগীর স্বজন তর্কে জড়িয়ে যায়।
তবে হাসপাতালে পৃথক ডেঙ্গু কর্ণারে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে দাবি করে ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. আসিফ ইকবাল বলেন, আক্রান্ত রোগীদের সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আক্রান্তদের জন্য পৃথক কর্ণার করা হয়েছে। তবে রোগীর চাপ বেশি হওয়ায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।
ফেনীর সিভিল সার্জন ডা. শিহাব উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে জানান, জেলায় আক্রান্তদের মধ্যে ৬৭ জন ইতোমধ্যে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন। বর্তমানে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ১৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে।
সিভিল সার্জন বলেন, আক্রান্তদের প্রায় সবাই ঢাকা-চট্টগ্রাম বা জেলার বাহির থেকে সংক্রমিত হয়ে এসেছে। তবে গত সপ্তাহে ২ জন রোগী আক্রান্ত হয়েছিল যারা ফেনীর বাইরে যায়নি। এজন্য সচেতনতার বিকল্প নেই। আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য সকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং ফেনী জেনারেল হাসপাতালে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।
ফেনী পৌরসভার প্রস্তুতি নিয়ে পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী জানান, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পৌর এলাকায় মাইকিং এবং ঔষুধ ছিটানো হচ্ছে।
তারেক চৌধুরী/আরকে