মাত্র ৭০০ টাকা মাসিক বেতনে একনাগাড়ে ১২ বছর জুনিয়াদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরীর দায়িত্ব নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে পালন করে আসছেন ভূমিহীন আজগর আলী (৪৮)। তিনি কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার জুনিয়াদহ গ্রামের মৃত ঈমান আলীর ছেলে। কিন্তু সম্প্রতি বিদ্যালয় কমিটি নতুন করে নৈশ প্রহরীসহ বেশ কয়েকটি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়। 

জানা গেছে, শনিবার (২২ জুলাই) সেই নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। নিয়োগের জন্য আজগর আলীও আবেদন করেছেন। বর্তমানে চাকরি নিয়ে সংকটে ভুগছেন তিনি।

নৈশ প্রহরী আজগর আলী একজন ভূমিহীন দরিদ্র মানুষ। এলাকার মানুষের সমর্থন রয়েছে তার পক্ষে। দীর্ঘ ১২ বছর মাস্টার রোলে চাকরি করার পর এখন চাকরি নিয়ে সংকটে ভুগছেন তিনি। এতদিন নিয়মিত তিনি বিদ্যালয়ে হাজিরা দিয়েছেন। নৈশ প্রহরী পদে নিয়োগ প্রক্রিয়াটি স্থগিত করে সেখানে আজগর আলীকে নিয়োগ দেবার উদ্দেশ্যে তিনি বিজ্ঞ সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা করেছেন।

এই মামলার ইনফরমেশন স্লিপসহ মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বরাবরে আবেদন করা হলেও আগামীকাল নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ বহাল রয়েছে।

এ ব্যাপারে জুনিয়াদহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি আজগর আলীর ১২ বছর নৈশ প্রহরী পদে চাকরি করার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, পরিবর্তিত সরকারি নিয়ম-নীতি প্রজ্ঞাপন এবং চাকরিবিধি অনুসারে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। আজগর আলীর প্রতি ব্যক্তিগতভাবে তার সহানুভূতি রয়েছে। কিন্তু তাকে বহাল রাখার বিষয়ে কোন ইতিবাচক কর্মকাণ্ড গ্রহণ করবার যথাযথ ক্ষমতা তার নেই বলে তিনি জানান। তিনি বিদ্যালয় কমিটির সদস্যবৃন্দসহ অন্যান্যদের উপরে দায়িত্ব চাপানোর চেষ্টা করেন।

এদিকে আজগর আলীর বিষয়ে বিদ্যালয়ের অফিসিয়াল কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ ব্যতিরেকে হুট করে লোকবল নিয়োগ থাকা সত্ত্বেও পরস্পর বিতর্কিত নিয়োগ প্রক্রিয়া পরিচালিত হতে দেখে অনেকের মাঝে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

স্কুলের নৈশপ্রহরী আজগর আলী বলেন, ২০১১ সালে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে নৈশপ্রহরীর পদে আমি নিয়োগ পাই। দীর্ঘ ১২ বছর আমি নৈশপ্রহরীর দায়িত্ব পালন করে আসছি। এখন নতুন করে এক দাতা সদস্যের ভাইয়ের ছেলেকে নিয়োগ দেওয়া হবে বলে শুনছি। এ বিষয়ে আমি মামলা করেছি। মামলাটি চলমান রয়েছে। ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে আমাকে বাদ দিয়ে অন্যজনকে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমি ভুমিহীন গরিব মানুষ। চাকরি থেকে বাদ দিয়ে দিলে না খেয়ে মরতে হবে। আমি সবার কাছে চাকরির আবেদন করছি। স্কুলটিকে অনেক ভালোবাসি। জীবনের বহুবছর এই স্কুলে কেটেছে। আমি চাকরিটা হারাতে চাই না। চাকরিটা খুব দরকার। আমাকে কায়দা করে বিদ্যালয় থেকে বিনাকারণে তাড়িয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করা হচ্ছে।  

রাজু আহমেদ/আরকে