‘প-২৩ জুড়ে অল্প সময়ে অনেক স্মৃতি’
ইনসেটে অ্যাডভোকেট সেগুফতা তাবাসসুম আহমেদ
বাসার নাম প-২৩। যার অর্থ পশ্চিমপাড়ার বাড়ি নম্বর-২৩। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এই প-২৩ নম্বরের বাসায় থাকতেন ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ। যে বাসাতেই খুন, সেই বাসার ম্যানহোলে ছিল মরদেহ। মামলার তদন্তের স্বার্থে আর ব্যবহার হয়নি বাড়িটি। ফলে দীর্ঘ সাড়ে ১৭ বছর বাড়িতে জ্বলেনি আলো। এমন অবস্থায় চারপাশের আগাছা আর অন্ধকারে প-২৩ নম্বর বাসাটিতে ভুতুরে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
বাসাটিতে বসবাসের স্মৃতি নিয়ে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা বলেছেন নিহত অধ্যাপক এস তাহের আহমেদের মেয়ে অ্যাডভোকেট সেগুফতা তাবাসসুম আহমেদ।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, বাসাটা সাড়ে ১৭ বছর ধরে পড়ে আছে। এই সময় কোনো আলো জ্বলেনি। আমার ভাই এসে কয়েকটা জিনিস নিয়ে গেছে। সব জিনিস নিতে পারেনি। বাসার জিনিস কীভাবে আছে জানি না। ওই বাড়িজুড়ে (প-২৩) অল্প সময়ে অনেক স্মৃতি রয়েছে আমাদের।
অ্যাডভোকেট সেগুফতা তাবাসসুম আহমেদ বলেন, এই বাসায় আমরা বেশি বছর থাকিনি। আগে রাবির অন্য কোয়ার্টারে থাকতাম। প্রায় তিন বছর থেকেছি। জিনিসপত্র সব ওখানে (রাবি কোয়ার্টার প-২৩) থেকে গেছে। সেই সময় আমি মাত্রই ঢাকায় ভর্তি হয়েছি। এলএলবিতে পড়তাম। সেই সুবাদে বাবা-মায়ের রাজশাহী থেকে ঢাকায় যাওয়া আসা করতো। তারা রাজশাহীতে যেত কিছু দিন পর পর, আবার চলে আসতো।
বিজ্ঞাপন
সরেজমিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিমপড়ার ২৩ নম্বর বাসায় গিয়ে দেখা গেছে, বাসাটির সামনে লোহার গ্রিলে তালা ঝুলছে। তালা দীর্ঘদিন না খোলায় জং পড়েছে। ভেতরের উঠানেও জন্মেছে নানা ধরনের লতাপাতার গাছ। যা দেখে বোঝাই যাচ্ছে দীর্ঘদিন পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে বাসাটি। ভেতরে বিভিন্ন আসবাবসপত্র ভেঙে পড়ে আছে। রুমের ভেতরে সোফাগুলো পড়ে আছে। তবে ফোম নেই। হয়তো দীর্ঘদিনে সেগুলোও নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া ভেতরের ও বাইরের জানালার কাচগুলো ভাঙা অবস্থায় রয়েছে।
ওই এলাকার গার্ড মো. মনির হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ১০ বছর থেকে চাকরি করছি রাবিতে। স্যার খুন হওয়ার পর থেকে বিল্ডিংটা এইভাবে পড়ে আছে। বিল্ডিংটা পরিত্যাক্ত হিসেবে আছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. নাজমুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘটনার পর থেকে বাসাটা ওই অবস্থায় রয়েছে। যেহেতু মামলার চূড়ান্ত রায় কার্যকর হয়েছে। এখন প-২৩ নম্বর বাসাটার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেবে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) রাত ১০টা ১ মিনিটে অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মো. মহিউদ্দিন এবং অধ্যাপক এস তাহেরের বাসার তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীর আলমের ফাঁসি কার্যকর করেছে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ।
প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারের ম্যানহোল থেকে অধ্যাপক এস তাহের আহমেদের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ওই বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি তার ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ বাদী হয়ে নগরীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ ছয়জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেয় পুলিশ। চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালত চারজনকে ফাঁসির আদেশ দেন এবং দুজনকে খালাস দেন।
শাহিনুল আশিক/আরএআর