জরিনা বেগম

পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলে চারদিন ধরে নিখোঁজ। অভাবের সংসার; ছেলে নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে এক বেলাও খাবার জোটেনি বৃদ্ধার। 

বাড়ির পাশের যে দোকান থেকে ছেলে মালামাল কেনেন; বাকিতে সেখান থেকে চাল-ডাল আনতে গিয়ে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে তাকে। দোকানদার বলেছেন; ছেলেকে ছাড়া বাকি দেবেন না। বাধ্য হয়ে ছেলেকে খুঁজছেন ৮০ বছরের বৃদ্ধা জরিনা বেগম। তার বাড়ি মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার দশকানি গ্রামে ও রামশিং গ্রামের মৃত আইয়ূব আলী সর্দারের স্ত্রী।

বুধবার বাড়ির সামনের চায়ের দোকানি হাসি বেগম ওই বৃদ্ধাকে বলেছেন তোমার ছেলে জেলে। তার কাছ থেকে এমন কথা শুনে দশকানি গ্রাম থেকে ছয় কিলোমিটার হেঁটে বৃহস্পতিবার (০১ এপ্রিল) মুন্সিগঞ্জ আদালতে এসেছেন জরিনা বেগম। আদালতের বাইরে দাঁড়িয়ে ওই বৃদ্ধা আইনজীবীদের জানান ছেলের সঙ্গে দেখা করতে জেলে যাবেন।

এ সময় তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চারদিন ধরে তার ছেলে নিখোঁজ। ছেলের সঙ্গে দেখা করতে জেলহাজতে যাবেন। তাকে জেলহাজতে নিয়ে যেতে বলেন বৃদ্ধা।

জরিনা বেগম জানান, ১৫ বছর আগে তার স্বামী তিন ছেলে রেখে মারা যান। অনেক কষ্টে ছেলেদের মানুষ করেছেন। বড় দুই ছেলে বিয়ে করে আলাদা সংসার পেতেছেন। মায়ের খোঁজ নেন না। ছোট ছেলে নুরুল ইসলাম (১৮) দিনমজুর। তাকে নিয়ে দশকানি গ্রামের আলী আকবরের বাড়িতে ভাড়া থাকেন। যখন যে কাজ পান তাই করেন নুরুল ইসলাম। কিন্তু চারদিন আগে কাজের সন্ধানে বাড়ি থেকে বের হয়ে ফেরেননি। 

বৃদ্ধা মা বলেন, চারদিন ধরে ভাত খাইনি। দোকানে গিয়েছিলাম বাকিতে চাল-ডাল আনতে। দোকানদার বলেছেন ছেলেকে ছাড়া দেবেন না। মানুষের কাছ থেকে চা-বিস্কুট চেয়ে নিয়ে খেয়ে বেঁচে আছি। অনেকের কাছে ভাত চেয়েছি। কেউ খেতে দেয়নি।

আদালতের মাধ্যমে বৃদ্ধার ছেলেকে সদর থানা পুলিশ কারাগারে পাঠিয়েছিল কি-না তা অনুসন্ধান করে পাওয়া যায়নি। ঢাকা পোস্টের প্রতিনিধি ওই বৃদ্ধাকে কিছু সহায়তা দিয়ে ছেলেকে অন্যত্র খুঁজে দেখার পরামর্শ দিলে কাঁদতে কাঁদতে লাঠিতে ভর করে বাড়ির দিকে রওনা হন।

ব.ম শামীম/এএম