আসিফ প্রামাণিক গোয়ালন্দ উপজেলার ছোটভাকলা ইউনিয়নের স্বরূপারচক গ্রামের বাদশা প্রামাণিক ও আসমা বেগম দম্পতির ছেলে। তার বাবা বাদশা প্রামাণিক দৌলতদিয়া ঘাটে ঝালমুড়ি বিক্রি করেন। চার ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে বার্ষিক ৪ হাজার টাকায় লিজে নেওয়া ৪ শতাংশ জমিতে একটি ঘরে তাদের বসবাস। নদীতে বাড়িঘর বিলীন হয়ে যায় তাদের। 

তবে এই কঠিন পরিস্থিতির মাঝেও লেখাপড়া চালিয়ে গেছে আসিফ। অধ্যাবসায় দিয়ে আসিফ গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া মডেল হাইস্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। দরিদ্র পরিবারের সন্তান হয়ে এসএসসি পরীক্ষায় এমন সাফল্যে আসিফের এলাকাবাসী থেকে শুরু করে শিক্ষকরা সবাই খুশি।

জানা গেছে, তিন বছর আগে পদ্মার ভাঙনে বাড়িঘর বিলীন হয় আসিফদের। তখন সে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিল। সবকিছু হারিয়ে অন্য ৮/১০টা ছেলের মতো ওখানেই থেমে যেতে পারত তার লেখাপড়া। জীবনের তাগিদে বাবার সঙ্গে নেমে যেতে পারত ঘাটের হকারি পেশায়। কিন্তু সে তা করেনি। এক মুহূর্তের জন্যও সে মনোবল হারায়নি। চালিয়ে গেছে এক কঠিন সংগ্রাম। যার ফল স্বরুপ সে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় পেয়েছে জিপিএ-৫।

আসিফের মা আসমা বেগম বলেন, পদ্মায় ভিটেমাটি হারিয়ে এখন আমরা লিজ নিয়ে পরের জমিতে থাকি। অভাব অনটনের সংসার।এ অভাব অনটনের মধ্যে আসিফকে লেখাপড়া শিখিয়েছি। সে এবার এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করেছে। যতদূর পারি আমি তাকে পড়ালেখা করাব। মানুষের মতো মানুষ করব।

আসিফের বাবা বাদশা প্রামাণিক বলেন, আমি দৌলতদিয়ায় লঞ্চ ও ফেরিতে ঝালমুড়ি বিক্রি যে আয় হতো তা দিয়ে সংসার চালাতাম।কিন্তু বর্তমানে দৌলতদিয়া ঘাটে যাত্রী কমে যাওয়ায় বেচা বিক্রির অবস্থা খুবই খারাপ। দিন শেষে ৩০০-৪০০ টাকার মতো থাকে। তা দিয়ে কোনোভাবে দিন পার করছেন। তবে আমার ছেলে আসিফ পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করেছে। এতে আমি খুব খুশি। কিন্তু তার পরবর্তী পড়ালেখা কিভাবে চালাব তা নিয়েও অনেক দুঃশ্চিন্তায় আছি।

আসিফ বলেন, আমার বাবা-মা অনেক কষ্ট করে আমাকে পড়ালেখা করাচ্ছে। বাবার সামান্য আয় দিয়ে সংসার চালানো অনেক কষ্ট হয়ে যায়। তাই আমি টিউশনি করে পরিবারকে কিছুটা সহযোগিতা করি। আমার এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য সবটুকু অবদান আমার বাবা-মা ও আমার শিক্ষকদের। আমি পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার জন্য যেকোনো কষ্ট সইতে প্রস্তুত আছি। আমার স্বপ্ন বড় হয়ে একজন ভালো চিকিৎসক হব। দেশের মানুষের সেবা করব।

দৌলতদিয়া মডেল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মুহম্মদ সহিদুল ইসলাম বলেন, আসিফ অদম্য মেধাবী একটা ছেলে। পড়ালেখা ছাড়া বিতর্ক, কুইজ, সাধারণ জ্ঞানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার অসাধারণ দক্ষতা রয়েছে। এজন্য জেলা-উপজেলার বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সে বহু পুরস্কারও অর্জন করেছে। আমরা বিগত ৫ বছর তাকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। সে আমাদেরকে গর্বিত করেছে। আমি তার মতো মেধাবীর পাশে দাঁড়াতে সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।

ছোট ভাকলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন বলেন, আসিফ অদম্য মেধাবী। সে দারিদ্র্যতাকে পেছন ফেলে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে।

মীর সামসুজ্জামান/আরকে