দেশের সবচেয়ে বড় আমবাজার চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে আম বিক্রি হচ্ছে ৫২-৫৪ কেজিতে মণ হিসেবে। কানসাট আমবাজার ছাড়াও জেলার বিভিন্ন উপজেলার আমবাজারগুলোতে একই ওজনের হিসেবে আম বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন আম চাষিরা। এক মণ আম বিক্রি করতে গিয়ে অতিরিক্ত আরও ১২-১৪ কেজি আম দিতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আম চাষি ও উদ্যোক্তারা। ৫২-৫৪ কেজির কম দিলে আড়তদার সিন্ডিকেট কিনছে না আম। এতে বিপাকে পড়েছেন আম চাষিরা। 

আম চাষিদের জিম্মি করে ৫২-৫৪ কেজিতে মণ ধরে আম কেনায় জেলার উৎপাদিত আমের ৫ ভাগের ১ ভাগ ফ্রি দিতে হচ্ছে চাষিদের। আর এই ৫ ভাগের ১ ভাগ আমের আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। একই পরিস্থিতি পাশের দুই জেলা রাজশাহী ও নওগাঁতেও। এই দুই জেলায় প্রায় ৩০০ কোটি টাকার অতিরিক্ত আম আড়তদারদের কাছে দিতে বাধ্য হচ্ছেন আমচাষিরা।
 
এসব অনিয়মের কথা উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী বরাবর ৫২-৫৪ কেজিতে আম কেনা বন্ধের আবেদন জানিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম চাষিরা। বৃহস্পতিবার (১০ আগষ্ট) দুপুরে রাজধানীর বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের সম্মেলন কক্ষে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জেলার ১০ জন আম চাষি, উদ্যোক্তা ও আম রপ্তানিকারকরা। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে কৃষি খাতে কী কার্যক্রমের বিষয়ে আলোচনা সভা শেষে কৃষিমন্ত্রীর কাছে লিখিত আবেদন করেন তারা।

আম চাষি ও উদ্যোক্তা সূত্রে জানা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জে বছরে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার ৫ লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদনে সম্পৃক্ত চার লাখ চাষি। কিন্তু আমের সঠিক ওজন দিতে না পারায় বছরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে উৎপাদিত  আমের প্রায় ৫০০ কোটি টাকার অতিরিক্ত আম আড়তদারদের কাছে দিতে বাধ্য হওয়ায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আম চাষিরা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী ও নওগাঁ জেলার আম চাষিরা ৮০০ কোটি টাকার আম আড়তদারদের দিতে বাধ্য হন প্রতি বছরই।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ ম্যাঙ্গো ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব আহসান হাবিব জানান, কৃষি ও আমের জন্য সরকার নানা ভালো পরিকল্পনা নেওয়ায় আমরা কৃতজ্ঞ। আমাদের দাবি পূরণ ও বাস্তবায়নে সরকারের যেমন কোনো অর্থ খরচ হবে না তেমনি সময়ও ব্যয় হবে না। চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমরা প্রতি বছর অতিরিক্ত ৫০০ কোটি টাকার আম চাঁদা দেওয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার পাশাপাশি নওগাঁ ও রাজশাহী জেলায় ৩০০ কোটি টাকাসহ আমরা তিন জেলার আম উৎপাদকারীরা প্রতি বছর ৮০০ কোটি টাকার ক্ষতি থেকে রক্ষা পাব।

তিনি আরও বলেন, ৪০-৪৫ কেজিতে মণে আম বিক্রি করতে আমচাষিদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু ৫২-৫৪ কেজিতে মণ বিক্রি করে অনেক ক্ষতি হচ্ছে। তাই ৪০-৪৫ কেজিতে আমের মণ নির্ধারন করার জন্য কৃষিমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছি।

এ সময় কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ৫২-৫৪ কেজিতে আমের মণ নেওয়া হয়, এমনটা আপনাদের মাধ্যমে জানলাম। আম চাষিরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত সমাধান করা হবে। 

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ম্যাঙ্গো ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব আহসান হাবিব, শিবগঞ্জ ম্যাঙ্গো কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল খান শামিম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম, আম চাষি ও উদ্যোক্তা আতিকুর রহমান মিলন, আবু নুহু, মাসুদ রানা, রফিকুল ইসলাম, মতিউর রহমান প্রমুখ। 

জাহাঙ্গীর আলম/আরএআর