অবশেষে বহুল প্রতীক্ষিত সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির দুয়ার খুলল। এর লক্ষ্য হচ্ছে দেশের ১৮ বছরের বেশি বয়সী সব নাগরিককে পেনশন সুবিধার আওতায় নিয়ে আসা। বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) বেলা ১১টা ১০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি সুবিধাভোগী তিনটি জেলা- রংপুর, গোপালগঞ্জ ও  বাগেরহাটের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

প্রাথমিভাবে পেনশন স্কিমে রংপুর নির্বাচিত হওয়ায় জেলার মানুষের মধ্যে আনন্দের জোয়ার বইছে। জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষ থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে সুরক্ষা স্কিমে নিবন্ধিত পঙ্গু বাবার একমাত্র উপার্জনক্ষম সন্তান ইফতেখার আজাদ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। 

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যা অঙ্গীকার করি সেটা রাখি। আজকে তার প্রমাণ। শুধু দলের জন্য না, আজকে বাংলাদেশের মানুষের জন্য করতে যাচ্ছি। সেটাই আমাদের জন্য আত্মতুষ্টির বিষয়।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সরকারি চাকরিজীবীরা পেনশন পান। যারা চাকরি করে না তারা তো পান না। কাজেই এটা সরকারি চাকরিজীবীর জন্য নয়। যারা সরকারি চাকরি করেন, বেতন পান, তাদের জন্য এটা প্রযোজ্য হবে না। সরকারি চাকরির বাইরে যে জনগোষ্ঠী শুধুমাত্র তাদের জন্য এই ব্যবস্থাটা আমরা করেছি। এটা করে যেন তারা সম্মানজনকভাবে বাঁচতে পারে। যার ফলে মানুষের মধ্যে যে বৈষম্য আছে সেটাও দূর হবে।

রংপুর থেকে সুরক্ষা স্কিমে নিবন্ধিত কৃষিশ্রমিক ইফতেখার আজাদ বলেন, ‘হামরা কৃষি কাজ করি। কৃষকেরা কি ভাবছিল হামরাও পেনশন পামো? আইজ প্রধানমন্ত্রী সেখান করি দ্যাখাইল। খুব নিশ্চিন্ত লাগতোছে। বুড়া বয়সোত তো আর কোনো কাজকাম করিবার পাবার নাও, পেনশন থাকলে মোর আর কোনো চিন্তা নাই।’  

সমতা স্কিমে নিবন্ধিত আরেক উপকারভোগী বলেন, আমার মতো বেসরকারি চাকরিজীবীরা প্রচণ্ড কষ্ট করে। এতদিন আমাদের কোনো পেনশনের ব্যবস্থা ছিল না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বজনীন যে পেনশনের ব্যবস্থা করেছেন এজন্য আমরা কৃতজ্ঞ। আমি নিজে পেনশন স্কিমের জন্য টাকা জমা দিয়েছি। পরিচিতদেরও পেনশন স্কিমের আওতাভুক্ত হওয়ার অনুরোধ করব।

এ সময় রংপুর জেলা প্রশাসনের কার্যালয় থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও রংপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য এইচ.এন. আশিকুর রহমান, রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মো. হাবিবুর রহমান, পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি মো. আব্দুল বাতেন, রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান, জেলা পুলিশ সুপার মো. ফেরদৌস আলী চৌধুরীসহ অন্যান্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান বলেন, সারাদেশের মধ্যে আটটি জেলায় পেনশন স্কিম চালু হয়েছে। এর মধ্যে রংপুর জেলাকে নির্বাচিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। এই পেনশন স্কিমের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন ঘটবে।

প্রগতি স্কিমটি বেসরকারি খাতের চাকরিজীবীদের জন্য, স্বকর্মে নিযুক্ত লোকদের জন্য সুরক্ষা, প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য প্রবাসী এবং দেশের নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য সমতা প্রযোজ্য হবে। শুরুতে চার শ্রেণির ব্যক্তি পেনশন কর্মসূচির আওতায় আসছেন। তারা হচ্ছেন- প্রবাসী বাংলাদেশি, বেসরকারি চাকরিজীবী, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মী এবং অসচ্ছল ব্যক্তি।

মাসিক চাঁদা ধরা হয়েছে সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা আর সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে কর্মসূচি পরিবর্তন এবং চাঁদার পরিমাণ বাড়ানোর সুযোগ থাকছে।  সর্বজনীন পেনশন স্কিমের মূল লক্ষ্য দেশের ১৮ বছরের বেশি বয়সী সবাইকে এর আওতায় আনা এবং তারা তাদের ৬০ বছর বয়স হওয়ার পর আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করবেন।

পেনশন-ব্যবস্থার বয়সসীমা প্রাথমিকভাবে ৫০ বছর নির্ধারণ করা হয়েছিল, কিন্তু পরে তা সংশোধন করা হয়। ৫০ বছরের বেশি বয়সীরাও টানা ১০ বছর কিস্তি পরিশোধের পর পেনশন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর