অলস পড়ে আছে হাজারো বই, নেই পাঠক
সাতক্ষীরা সরকারি গণগ্রন্থাগারে সারিবদ্ধ আলমারিতে সাজানো রয়েছে হাজারো বই। তবে নেই পাঠকদের আনাগোনা। বই পড়া, পত্রিকা পড়া, ফ্রি ইন্টারনেট সেবাসহ সব সুযোগ-সুবিধা থাকার পরও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পাঠকের দেখা মেলে না এখানে।
তবে চাকরিজীবীরা বিশেষ করে শনিবারে গণগ্রন্থাগারে আসেন তাদের পছন্দের বই পড়তে ও পড়ার অভ্যাস ধরে রাখতে। তবে উঠতি বয়সের স্কুলকলেজের শিক্ষার্থীদের অনলাইন ও মোবাইলের প্রতি আসক্ত হয়ে ওঠায় তাদের দেখা মেলে না।
বিজ্ঞাপন
সংশ্লিষ্টদের ধারণা মতে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্তিসহ নানাবিধ কারণে শিক্ষার্থীসহ সব বয়সীদের বই পড়ার প্রতি অনীহা সৃষ্টি হয়েছে।
বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম দিনে দিনে সাহিত্য চর্চা ও বই পড়ার অভ্যাস হারিয়ে ফেলছে। স্ব স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি অন্য বই পড়তে উদ্বুদ্ধ না করায় বইয়ের প্রতি অনীহা তৈরি হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
সাতক্ষীরা সরকারি গণগ্রন্থাগারে আসা পাঠকদের সঠিক সংখ্যা জানতে শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) ও রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, এখানে পাঠকদের একই সঙ্গে বসার জন্য ১০৫টি চেয়ার থাকলেও। পাঠক রয়েছে মাত্র ১৫ জন। উপস্থিত পাঠকদের মধ্য চার থেকে পাঁচ জন বই পড়ছেন অন্যরা সবাই ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। আবার তাদের মধ্য কয়েকজন সামনে পত্রিকা রেখে মোবাইল ফোনে ভিডিও দেখছেন।
গণগ্রন্থাগারে কম্পিউটার জোন রয়েছে। যেখানে থাকা তিনটি কম্পিউটার ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে পাঠকদের জন্য। নতুন করে শিশু কর্নার তৈরি করা হয়েছে, যেখানে শিশুদের বিভিন্ন খেলনা নিয়ে খেলার সুযোগ রয়েছে। ফ্রি ইন্টারনেট সেবাসহ নানাবিধ সুবিধার ব্যবস্থা করেছে সরকার। আগত পাঠকদের রেজিস্টার খাতা থেকে গত এক সপ্তাহে পাঠকের গড় সংখ্যা দেখা গেছে ২৫ জনের মত। যেটা আগে ৬০-৭০ জন ছিল।
গণগ্রন্থাগারে বই পড়তে আসা তহিদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, সময় সুযোগ পেলে এখানে বই পড়তে আসি। তবে চাহিদা মোতাবেক বই সরবরাহ নেই। পাঠক কমে যাওয়ার কারণের মধ্যে এটি অন্যতম। এখানে গতানুগতিক ধারার বই বেশি। লাইব্রেরিতে পর্যাপ্ত আলো বাতাস সরবরাহের ব্যবস্থা না থাকায় লোডশেডিংয়ের সময় এখানে বসে পড়তে পাঠকদের খুব কষ্ট হয়।
মিলন বিশ্বাস নামের অপর এক পাঠক বলেন, নিয়মিত এখানে পত্রিকা ও বই পড়তে আসি তবে পাঠকের সংখ্যা খুব কম হওয়ায় পড়ার প্রতি অনীহা তৈরি হয়। এখানে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক অনেক বই আছে যেগুলো নিয়মিত পড়ি। মাঝেমধ্যে আসতে না
পারলে তখন অনলাইনে থাকা বইয়ের পিডিএফ ফাইল ডাউনলোড করে পড়ি। যেহেতু অনলাইনে যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে সেজন্য অনেকে এখনকার দিনে লাইব্রেরিতে এসে বই পড়তে চায় না।
সাতক্ষীরা সরকারি গণগ্রন্থাগারের সহকারী লাইব্রেরিয়ান মো. জিয়ারুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখানে বিভিন্ন লেখকের মোট ৩৪ হাজার ১৬টি বই সংগ্রহে রয়েছে। তাছাড়া আরও কিছু নতুন বই আনার প্রস্তুতি চলছে। অতিসম্প্রতি শিশুদের খেলার জন্য শিশু কর্নার তৈরি করা হয়েছে। তাছাড়া এখানকার সদস্য রয়েছে ১১৩ জন যারা সবাই বই ধার নিয়ে পড়ে থাকেন। একই সঙ্গে একটি ইংরেজি পত্রিকাসহ জাতীয় দৈনিক মোট ১৫টি সংবাদপত্র নিয়মিত নেওয়া হয়।
উল্লেখযোগ্য পাঠকের উপস্থিতি না থাকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বই পড়ার প্রতি উদ্বুদ্ধ করার জন্য বছরে ৯টি অনুষ্ঠান করা হয়। যেখানে অংশগ্রহণের জন্য শহরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চিঠি দেওয়া হয়। অনেকে সেখানে অংশগ্রহণ করেন। বই পড়ার উপকারিতাসহ নানাবিধ বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করা হয়। তবে আগের তুলনায় ইদানীং পাঠকদের আনাগোনা একটু বেড়েছে।
সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আমানউল্লাহ হাদী ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ যুগের ছেলে মেয়েদের বেশি বই পড়ার কথা থাকলেও তারা সেটা করে না। প্রযুক্তির ব্যবহার শিক্ষার্থীদের বইয়ের প্রতি অনীহা সৃষ্টি করছে। লাইব্রেরিতে যারা দায়িত্বে আছেন তারা চেষ্টা করেন সবাইকে বই পড়ার অভ্যাস করাতে। তবে মোবাইলের প্রতি অতিরিক্ত আগ্রহের কারণে সেটা করা সম্ভব হচ্ছে না। সাতক্ষীরা সরকারি গণগ্রন্থাগারে কয়েকবার গিয়েছি, বেশ কিছু পুরাতন লোক যারা ছাত্র না অথবা চাকরি থেকে অবসর প্রাপ্ত তারা সেখানে নিয়মিত বই পড়েন।
তাছাড়া নতুন প্রজন্ম খুব কম যাতায়াত করেন। কলেজে কত সুন্দর লাইব্রেরি রয়েছে সেখানেও একই অবস্থা। কলেজ-ক্যাম্পাস জুড়ে সবাই মোবাইল নিয়ে বসে আছেন। কিন্তু একজন শিক্ষার্থীও লাইব্রেরিতে গিয়ে বই পড়ে না।
তিনি আরও বলেন, এখন প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে সমগ্র বিশ্ব চলছে। এ সময় যদি আমরা নির্দিষ্ট একটি বয়স পর্যন্ত বাচ্চাদের মোবাইল থেকে দূরে রাখি তাহলে কিছুটা হলেও বইয়ের প্রতি তাদের আগ্রহ বাড়বে।
সোহাগ হোসেন/আরকে