সরকারের কাছ থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া বাড়িটিকে ‘কাঙালিনী সুফিয়া একাডেমি’ করলেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত খ্যাতনামা বাউল শিল্পী কাঙালিনী সুফিয়া।

সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২টায় রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের কল্যাণপুর গ্রামে সুফিয়া একাডেমির উদ্বোধন করেন রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সূবর্ণা রাণী সাহা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. সোহাগ হোসেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইমদাদুল হক বিশ্বাস, সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা হুমায়রা সুলতানা, সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রকিবুল হাসান পিয়াল, আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক, জেলা যুবলীগের সভাপতি শওকত হাসান প্রমুখ।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন রাজবাড়ী জেলা শিল্পকলার কালচারাল অফিসার পার্থ প্রতিম দাস।

জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান বলেন, বাউল শিল্পী কাঙালিনী সুফিয়া আমাদের রাজবাড়ী জেলার গর্ব। তিনি একজন জাতীয় শিল্পী। তার স্মৃতি ধরে রাখতে এখানে সুফিয়া একাডেমি করা হয়েছে। এই একাডেমি রাজবাড়ীর সংস্কৃতি জগতে একটি নতুন মাইলফলকের সূচনা করেছে। একাডেমিতে নিয়মিতভাবে সংস্কৃতি চর্চার পাশাপাশি বাংলার আবহমান লোকসংস্কৃতি ও কাঙালিনী সুফিয়ার জীবন এবং কর্ম সম্পর্কিত বিভিন্ন স্মারক প্রদর্শন করা হবে।

জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত বাউল শিল্পী কাঙালিনী সুফিয়া বলেন, সরকার আমাকে উপহার হিসেবে কল্যাণপুর গ্রামে এই ঘরটি দিয়েছে। আমার শেষ জীবনে ইচ্ছে ছিল এখানে আমার নামে একাডেমি করবো। জেলা প্রশাসকের সহায়তায় আমার শেষ ইচ্ছা পূরণ হয়েছে।

উল্লেখ্য, রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের রামদিয়া গ্রামে জন্ম নেওয়া কাঙালিনী সুফিয়ার আসল নাম টুনি হালদার। ১৯৬১ সালে জন্ম নেওয়া এ শিল্পীর বাবার নাম খোকন হালদার ও মা টুলু হালদার। কাঙালিনী সুফিয়া লালনগীতি, লোকসংগীত, বাউল গান করেন। তিনি একতারা হাতে ১৯৭৫ সাল থেকে গান গেয়ে আসছেন। তিনি কোনবা পথে নিতাইগঞ্জে যাই; পরাণের বান্ধব রে, বুড়ি হইলাম তোর কারণে; নারীর কাছে কেউ যায় না; আমার ভাটি গাঙের নাইয়া প্রভৃতি গানের জন্য বিখ্যাত।

গ্রাম্য একটি গানের অনুষ্ঠানে ১৪ বছর বয়সে কাঙালিনী সুফিয়া তার সংগীত জীবন শুরু করেন। মাত্র ১৫ বছর বয়সে সুধির হালদার নামের এক বাউলের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তবে সেই বিয়ে বেশি দিন টিকেনি। ১৯৭৮ সালে ওস্তাদ হালিম বয়াতির শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন কাঙালিনী সুফিয়া। সেসময় তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে সুফিয়া খাতুন নাম ধারণ করেন। তার গুরু দেবেন থাপা, গৌর মোহন্ত। তার প্রিয় শিল্পী লালন ফকির ও আব্দুল আলীম। সুফিয়ার মোট রচিত গানের সংখ্যা প্রায় ৫০০। তিনি রাজ সিংহাসন চলচ্চিত্রে প্রথম কণ্ঠ দেন। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, চীন, ভারতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সাবেক ডিজি মুস্তাফা মনোয়ার তাকে কাঙালিনী উপাধি দিয়েছিলেন। তারপর থেকে তিনি সুফিয়া খাতুন থেকে দেশব্যাপী কাঙালিনী সুফিয়া নামে পরিচিত হন। দেয়াল, নোনাজলের গল্প প্রভৃতি নাটকে অভিনয় করেন কাঙালিনী সুফিয়া। আর তারই রচিত ‘বুড়ি হইলাম তোর কারণে’ গানটি অবলম্বনে নির্মিত হয় নোনাজলের গল্প। সেখানে সুফিয়া প্রধান চরিত্র একজন বাউলের ভূমিকায় অভিনয় করেন। এছাড়া তিনি ১৯৯৭ সালে বুকের ভেতর আগুন নামে একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। সংগীতে তিনি প্রায় ৩০টি জাতীয় ও ১০টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেছেন।

মীর সামসুজ্জামান/এমজেইউ