জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার ধরঞ্জী বাজার এলাকার একটি বাড়ির গোসলখানা বানানোর জন্য মাটি খুঁড়তে গিয়ে এক ব্যক্তির লাশ পাওয়া গেছে। খবর পেয়ে মাটি খুঁড়ে লাশটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। লাশটি গলিত অবস্থায় পাওয়া যাওয়ায় পরিচয় জানা যায়নি।

শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টার দিকে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে। 

স্থানীয়রা জানান, গত ২২ এপ্রিল ধরঞ্জী গ্রামের নাইম হোসেন (২৩) নামে এক তরুণ নিখোঁজ হয়েছিলেন। এটি তারই লাশ হতে পারে। তাকে হত্যার পর ফাঁকা স্থানে মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছে। 

তবে ডিএনএ রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত এই লাশের সঠিক পরিচয় জানা যাবে না বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, দুজন রাজমিস্ত্রী ও দুজন শ্রমিক নিয়ে ওই বাড়ির মালিক সামছুল ইসলাম নির্মাণের কিছু কাজ করছিলেন। বাড়ির সঙ্গে ফাঁকা স্থানে গোসলখানা বানানোর জন্য এক শ্রমিক মাটি খুঁড়ছিলেন। সে সময় তিনি কাপড় ও দুর্গন্ধ পেয়ে প্রধান মিস্ত্রীকে জানান। পরে বাড়ির মালিককে বিষয়টি অবগত করলে তিনি পুলিশে খবর দেন। পুলিশ গিয়ে মাটি খুঁড়ে লাশটি উদ্ধার করে।

এদিকে একই গ্রামের মৃত মাসুদ রানার ছেলে নাইম হোসেন নামের এক তরুণ চলতি বছরের ২২ এগ্রিল রাত ৮টার দিকে ধরঞ্জী বাজারে যাওয়ার কথা বলে বাইরে বের হয়ে বাড়ি ফেরেননি। অনেক খোঁজাখুঁজি করে তাকে না পেয়ে ওই মাসের ২৫ এপ্রিল নাইমের মামা ওহেদুল ইসলাম পাঁচবিবি থানায় সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করেন। জিডি করার সাড়ে ৪ মাস পার হলেও নাইমের খোঁজ পাওয়া যায়নি। এই লাশ উদ্ধারের পর স্থানীয়রা এটি নাইমের লাশ বলে ধারণা করছেন।

পাঁচবিবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, যেই স্থানে লাশটি পাওয়া গেছে। সেটি ফাঁকা স্থান ছিল। ওই বাড়ির মালিক বাইরে থাকতেন। তিনি বাড়িতে এসে রাজমিস্ত্রী লাগিয়ে নির্মাণের কিছু কাজ করছেন। ফাঁকা স্থানে গোসলখানা বানানোর জন্য মাটি খুঁড়তে গিয়ে কাপড় ও দুর্গন্ধ পেয়ে আমাদের খবর দিলে মাটি খুঁড়ে লাশ পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে, এটি পুরুষের লাশ। লাশের নমুনা ফরেনসিক বিভাগে পাঠানো হবে। রিপোর্ট পেলে সঠিক পরিচয় জানা যাবে।

তিনি বলেন, নিখোঁজ নাইম হোসেনের খোঁজ পাওয়া যায়নি। এটি তার লাশ কিনা ডিএনএ রিপোর্ট পাওয়ার পর জানা যাবে। ওই বাড়ির মালিক পুলিশি হেফাজতে আছেন। বাড়ির ভাড়াটিয়া রেজ্জাকুল ওরফে রাজ্জাক ও তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনকে পাওয়া যাচ্ছে না।

নির্মাণ শ্রমিক রবিউল ইসলাম বলেন, কাজ করতে করতে সিমেন্ট মসলা বেশি হয়েছিল। তখন গোসলখানার স্থান খোঁড়ার জন্য আমাকে বলা হয়। সেখানে লাউ, কুমড়া, পুঁইশাকের গাছ ছিল। এগুলো একসাথে কঞ্চি দিয়ে ঘেরানো ছিল। এসব তুলে ফেলে দেওয়ার পর ওই জায়গা দেবে যাচ্ছে। এরপর এক কোদাল মারার পর কাপড় বেঁধেছে এবং গন্ধ করছে। তখন আমি মেইন মিস্ত্রিকে বিষয়টি অবগতি করি। উনি এসে দুই কোদাল কোপ মারার পর আরও গন্ধ বের হয়। তখন বিষয়টি বাড়িওয়ালাকে বলার পর থানায় জানানো হয়। এরপর ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ইশতিয়াক আলম বলেন, ধরঞ্জী বাজার এলাকায় একটি বাড়িতে মৃতদেহ পাওয়ার সংবাদ পাওয়া যায়। ঘটনাস্থলে এসে মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এটি সম্পূর্ণ গলিত এবং কিছু হাড় পাওয়া গেছে। আমরা এই মরদেহের নমুনা সংগ্রহ এবং আলামত জব্দ করেছি। পরবর্তীতে মরদেহ শনাক্তকরণ সাপেক্ষে আমরা প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেব। সেই সঙ্গে এই ঘটনার সত্যতা উদঘাটনের চেষ্টা করা হচ্ছে।

চম্পক কুমার/এমএসএ