দুই শ্রমিক আবদুল করিম ও আনারুল ইসলাম

‘সন্ধ্যার পর ঝড় বৃষ্টিতে আটকে পড়ি। রাতে আর কোনো যানবাহন না পাওয়ায় বাসস্ট্যান্ডেই নির্ঘুম রাত কাটিয়েছি। এখন দুপুর ১২টায়ও কোনো গাড়ি পাচ্ছি না। কীভাবে বাড়ি যাবো, কী খাবো, কোথায় থাকবো বুঝতে পারছি না। এ কোন আজাবের মধ্যে পড়লাম। কাজ শেষে বাড়ি যেতে পারলাম না।’

কথাগুলো বলছিলেন রাজশাহী থেকে বাগেরহাটে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে আসা আবদুল করিম ও আনারুল ইসলাম নামে দুই শ্রমিক। সোমবার (০৫ এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে বাগেরহাট বাসস্ট্যান্ডে কথা হয় তাদের সঙ্গে। 

আবদুল করিম ও আনারুল বলেন, ১৫ দিন আগে আমরা বাগেরহাটের সাইনবোর্ড এলাকায় আসি রাজমিস্ত্রির কাজ করতে। গতকাল কাজ শেষে ব্যাগ গুছিয়ে বাসস্ট্যান্ডের দিকে রওনা দেই। পথিমধ্যে হঠাৎ ঝড়ের কবলে পড়ি। বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছাতে রাত ১০টা বেজে যায়। কোনো গাড়ি নেই, বিকল্প কোনো ব্যবস্থাও নেই। সারারাত এই যাত্রী ছাউনিতেই বসে ছিলাম। ভোর থেকেই অপেক্ষা করছি যদি বাড়ি ফেরার কোনো ব্যবস্থা হয়। এরপরও রিকশা, ভ্যান ও মোটরসাইকেলে করে যাওয়ার চেষ্টা করি। তবে ভাড়া তিন গুণ হওয়ায় যেতে পারিনি। 

লকডাউনের কারণে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় বাড়ি ফিরতে না পেরে বিড়ম্বনায় পড়েছেন অনেক কর্মহীন মানুষ। তারা বাসস্ট্যান্ডে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন। পটুয়াখালী থেকে আসা পাঁচজন বিদ্যুৎ শ্রমিক আটকে আছেন বাগেরহাট বাসস্ট্যান্ডে। তারা যাবেন যশোর ও খুলনায়। 

এদের মধ্যে রিপন ও আকাশ বলেন, আমরা পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে পোল নাম্বারিংয়ের কাজ করতাম। গতকাল রাতে কাজ শেষে আমাদের বাড়ি ফেরার কথা ছিল। কিন্তু রাতে ঝড়-বৃষ্টি হওয়ায় ফিরতে পারিনি। ভোরে উঠে বিভিন্ন যানবাহনে করে বাগেরহাট বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছাই। কিন্তু এখন আর কোনো পথ পাচ্ছি না যাওয়ার।

হেঁটেই গস্তব্য যাচ্ছেন অনেকে

অসুস্থ বোনকে দেখতে খুলনা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে যেতে হবে। বোন বেশি অসুস্থ। পণ্যবহনকারী কোনো ট্রাক বা পিকআপ দেখলেই ছুটে যাচ্ছেন বাগেরহাট কেবি বাজার এলাকার বাসিন্দা  মো. সাইফুল ইসলাম, যদি কোনোভাবে যাওয়া যায়।

গণপরিবহন বন্ধ থাকায় একটু দূরের পথ যেতে সাধারণ মানুষকে বাধ্য হয়েই উঠতে হচ্ছে অটোরিবকশা বা ভ্যানে। অনেকেই আবার দুই থেকে তিন গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে মোটরসাইকেলে করে যাচ্ছেন গন্তব্যে।  

এদিকে বাগেরহাটের কয়েকজন রিকশাচালক বলেন, লকডাউনের কারণে ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত তেমন কোনো আয়-রোজগার করতে পারিনি। একদিকে কিস্তির টাকা পরিশোধের চিন্তা, অন্যদিকে সংসারের খরচ। এই নিয়েই আছি মহা সমস্যায়।

অন্যদিকে বাগেরহাটে শহরের বেশিরভাগ দোকান বন্ধ রয়েছে। বন্ধ দোকানের সামনে অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে স্থানীয়দের। কেউ খবরের কাগজ পড়ছেন, কেউ আড্ডা দিচ্ছেন। তবে লকডাউনের প্রথম দিনে বেশিরভাগ মানুষই মাস্ক পরা ছিলেন। 

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক আ ন ম ফয়জুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে লকডাউনে সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমরা কাজ করছি। কর্মহীন খেটে খাওয়া মানুষের যাতে কষ্ট না হয় সে বিষয়টিকে সামনে রেখে খুব দ্রুতই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সচেতন থাকার আহ্বান জানান তিনি। 

তানজীম আহমেদ/আরএআর