চোর আতঙ্কে যশোরবাসী, ১০ দিনে ৫ চুরি
যশোর শহরে গত ২ সেপ্টেম্বর থেকে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১০ দিনে ১টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ ৬টি বাসাবাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটেছে। সবকয়টি চুরির ঘটনাই প্রশাসনের নাকের ডগায় ঘটায় নিরাপত্তা ব্যবস্থার দিকে আঙুল তুলছেন সচেতন নাগরিকরা।
তারা বলছেন, বিশেষ করে রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢিলেঢালা হওয়ায় প্রতিনিয়ত বড় বড় চুরি করার সুযোগ পাচ্ছে চোরেরা। অন্যদিকে একের পর এক চুরির ঘটনা ঘটলেও কোনো আসামি আটক বা চুরি যাওয়া মালামাল উদ্ধার করতে পারছে না পুলিশ।
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি যশোরের শহরের পাইপপট্টি এলাকায় আরিফ জিহাদ নামের এক বাসিন্দার বাসায় জানালার গ্রীল কেটে ঘরে প্রবেশ করে নগদ টাকা, স্বর্ণলংকার লুট করে নিয়ে যায় চোরেরা। এ সময় বিভিন্ন আসবাবপত্র তছনছ করে। মঙ্গলবার ১২ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
এর আগে গত ১১ সেপ্টেম্বর দিনে দুপুরে শহরের কাঠালতলা আমির আলী গার্ডেনে অবস্থিত সাংবাদিক আলমগীর কবিরের বাসায় চুরির ঘটনা ঘটে। এ সময় চোরেরা কৌশলে বাড়িতে প্রবেশ করে স্বর্ণলংকারসহ নগদ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা চুরি করে নিয়ে যায়।
বিজ্ঞাপন
এর আগে গত ৭ সেপ্টেম্বর পুলিশ সুপার বাংলোর অদূরে আরবপুরে আয়েশা বাড়ি লেনের ৫ম তলার একটি বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটে। দুর্বৃত্তরা ওই বাসা থেকে নগদ সোয়া ৩ লাখ টাকা ও ৭ ভরি স্বর্ণালঙ্কার চুরি করে নিয়ে যায়। আয়েশা বাড়ি লেনের এ জেড এম আনোয়ার হোসেন নামে এক ব্যক্তির ৫ম তলা ভবনের ৫ম তলার একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন মো. আসাদুজ্জামান। তার স্ত্রী স্কুলে শিক্ষকতা করেন। ওইদিন সকালে স্ত্রী ঘরে তালা দিয়ে স্কুলে চলে যান। তখন বাসায় আর কেউ ছিল না। এরপর দুপুর ১টার দিকে মো. আসাদুজ্জামানের স্ত্রী স্কুল থেকে বাসায় ফিরে এসে দরজায় লাগানো তালা ভাঙা দেখতে পান। আলমারির ভেতর নগদ ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা ও ৭ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ছিল।
গত ৩ সেপ্টেম্বর শহরের রেলরোড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে যশোর নগর মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সাবিয়া সুলতানার বাড়িতে চুরি হয়। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, রাত ৮টা ২০ মিনিটে চোরেরা বাড়িতে প্রবেশ করে নগদ ৬২ হাজার ৫শ টাকা ও এক ভরি সোনা নিয়ে যায়। এই ঘটনায় তিনি থানায় লিখিত অভিযোগও করেছিলেন।
এরই ঠিক একিদন আগে ২ সেপ্টেম্বর সকাল ৭টার দিকে ৫ থেকে ৬ জন চোর দোকান থেকে মোবাইল চুরির পর ব্যাগভর্তি করে বেরিয়ে যাচ্ছে। তারা কোতোয়ালি থানার সামনে থেকে চলে গেছে বলে একটি বেসরকারি ব্যাংকের সিসি ক্যামেরায় দেখা গেছে। এ ঘটনার পর আশপাশের অন্য ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। এই এলাকাটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল এবং পাশেই কোতোয়ালি থানা ও প্রতিমন্ত্রীর বাসভবন হওয়ার পরও সেখানে কিভাবে এতো বড় চুরি সংঘটিত হয় তা নিয়ে কৌতুহল রয়েছে মানুষের মধ্যে।
শহরের কাজীপাড়া আমতলা এলাকার বাসিন্দা মামুন শেখ বলেন, চলতি মাসে যশোরে একাধিক চুরির ঘটনা ঘটেছে। তবে এখনো আমরা শুনলাম না যে এ ঘটনায় পুলিশ কোনো চক্রকে আটক করতে পেরেছে। আমরা দিনে-রাতে আতঙ্কে থাকি।
ধর্মতলার বাসিন্দা ইমরান হোসেন বলেন, বিশেষ করে রাতে যদি শহরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয় তাহলে এ চুরির ঘটনা সংঘটিত হওয়ার সুযোগ থাকবে না। বার বার এমন ঘটনা ঘটায় সাধারণ মানুষ নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
এ বিষয়ে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ('ক' সার্কেল) জুয়েল ইমরান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমদের কাছে লালদিঘির পাড়ে চুরির ঘটনা এবং আরবপুরে একটি বিমানবাহিনীর অফিসারের বাসায় চুরির ঘটনা এই দুটির তথ্য আমাদের কাছে আছে। আমরা এই চুরির বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি এবং চুরির সাথে জড়িত আসামি আটক এবং মালামাল উদ্ধারে আমদের থানা পুলিশসহ গোয়েন্দা পুলিশও কাজ করছে। শিঘ্রই আমরা এটির রহস্য উন্মোচন ও আসামি আটক এবং চুরি যাওয়া মালামাল উদ্ধার করতে পারব।
এ্যান্টনি দাস অপু/আরকে