বাবা-মা-বোনকে গুলি করে হত্যা করা তরুণ হায়দার পরিবারের
নিহত পরিবারের সদস্যদের ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের অ্যালেন শহরে নিহত ছয় বাংলাদেশির বাড়ি পাবনায়। শহরের দোহারপাড়ার বিখ্যাত হায়দার পরিবারের সদস্য তারা। তাদের মৃত্যুর খবরে স্বজনদের মধ্যে শুরু হয় আহাজারি। বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।
মঙ্গলবার (০৬ এপ্রিল) সকাল থেকে নিহতদের স্বজন ও প্রতিবেশীরা বাসায় জড়ো হন। স্বজনরা বিশ্বাস করতে পারছেন না ঘটনাটি। তাদের মৃত্যুর ঘটনা রহস্যজনক বলছেন তারা। একই সঙ্গে ছয়জনের মরদেহ দেশে এনে গ্রামের বাড়িতে দাফনের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
সোমবার (০৫ এপ্রিল) দুপুরে অ্যালেন শহরের পাইন ব্লাফ ড্রাইভ এলাকার ১৫০০ নম্বর ব্লকের একটি বাড়ি থেকে একই পরিবারের ছয় সদস্যের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
তারা হলেন তৌহিদুল ইসলাম (৫৪), তার স্ত্রী আইরিন ইসলাম (৫৬), তৌহিদুল ইসলামের শাশুড়ি আলতাফুন নেসা (৭৭), দুই পুত্র তানভীর তৌহিদ (২১) ও ফারহান তৌহিদ (১৯) এবং কন্যা ফারবিন তৌহিদ (১৯)। ফারহান এবং ফারবিন জমজ ভাই-বোন ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে টেক্সাসে সপরিবারে বসবাস করেন সিটি ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট তৌহিদুল ইসলাম ওরফে স্যাম তৌহিদ। স্ত্রী আইরিন ইসলাম নীলা, তিন সন্তান তানভীর তৌহিদ, ফারহান তৌহিদ এবং কন্যা ফারবিন তৌহিদকে নিয়ে শান্তিতে বসবাস করছিলেন। তৌহিদের শাশুড়ি আলতাফুন নেসাও তাদের সঙ্গে ছিলেন।
গত বৃহস্পতিবার (০১ এপ্রিল) পাবনায় ফেরার কথা ছিল আলতাফুন নেসার। ওই দিন না আসায় শুক্রবার (০২ এপ্রিল) রাতে পাবনায় ছেলেদের সঙ্গে মোবাইলে কথা হয় তার। তখন তিনি জানান করোনার কারণে ফ্লাইট বাতিল হয়ে ৭ এপ্রিল নির্ধারণ হয়। ওই দিন দেশে ফিরবেন বলে জানান। এর মধ্যে ঘটে যায় হত্যাকাণ্ড।
টেক্সাস পুলিশ জানায়, পরিবারের সদস্যদের গুলি করে হত্যার পর আত্মহত্যা করেছেন তরুণ দুই ভাই। প্রচণ্ড হতাশা থেকে তারা এই ভয়াবহ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে পুলিশের ধারণা।
তবে পুলিশের এ বক্তব্য বিশ্বাস করতে পারছেন না স্বজনরা। তারা জানিয়েছেন, আসলে কি ঘটেছে; তা তদন্ত করে দেখা হোক। একই সঙ্গে তাদের মরদেহ দেশে আনার ব্যবস্থা করা হোক।
নিউইয়র্কে বসবাসকারী কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্ট ও পাবনার বাসিন্দা গোপাল সান্যাল বলেন, মর্মান্তিক ঘটনার শিকার পরিবারের সদস্যরা পাবনার দোহারপাড়ার বিখ্যাত হায়দার পরিবারের সদস্য। দোহারপাড়ার বিখ্যাত ব্যক্তি জিয়া হায়দার, রশিদ হায়দার। তাদের আত্মীয়-স্বজন এরা। এ ঘটনা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না।
আলতাফুন নেসার ভাই আব্দুল হান্নান তালুকদার বলেন, তারা সবাই খুব ভালো মানুষ ছিলেন। তাদের আত্মহত্যা করার কথা নয়। ঘটনার তদন্ত করে সত্যটা জানানো হোক আমাদের। পাশাপাশি তাদের মরদেহ দেশে আনার ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানাই।
আলতাফুন নেসার ছেলে আবুল কালাম আজাদ বলেন, গণমাধ্যমে দেখেছি; পরিবারের চারজনকে গুলি করে হত্যার পর আত্মহত্যা করেছেন দুই ভাই। বিষয়টি কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারছি না।
পাবনার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. কবির মাহমুদ বলেন, বিষয়টি জেনেছি। পরিবার থেকে এখনো কোনো অভিযোগ কিংবা অনুরোধ আমাদের জানানো হয়নি। যদি তারা জানায় তাহলে তাদের আবেদন অনুযায়ী সরকারিভাবে সহযোগিতা করা হবে।
রাকিব হাসনাত/এএম