ঢাকা পোস্টে সংবাদ প্রকাশ
বাঁশি বাজিয়ে লজেন্স বিক্রি করা দৃষ্টিহীন সেই রফিকুলের পাশে ডিসি
ছোটবেলায় টাইফয়েড জ্বরে দুই চোখ হারিয়ে দৃষ্টিহীন হয়ে পড়েন রফিকুল ইসলাম। কিন্তু এরপরও ভিক্ষাবৃত্তিকে বেছে নেননি তিনি। বাঁশি বাজিয়ে লজেন্স বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে পুঁজি ফুরিয়ে লজেন্স কেনার সামর্থ্য না থাকায় প্রায়ই কষ্ট করতে হতো তাকে।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর দৃষ্টিহীন রফিকুল ইসলামকে নিয়ে দেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্ট ‘বাঁশি বাজিয়ে লজেন্স বিক্রি করেন রফিকুল’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে। ওই সংবাদ প্রকাশের পর শরীয়তপুর সদর উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের নজরে আসে রফিকুল ইসলামের জীবনসংগ্রাম। এরপর জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নিজাম উদ্দীন আহাম্মেদ দৃষ্টিহীন রফিকুল ইসলামের খোঁজখবর নিতে সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জ্যোতি বিকাশ চন্দ্রকে নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করলে রফিকুল ইসলাম জানান ‘নগদ অর্থ নয়, লজেন্স ও বাঁশি কিনে দিলে নিবেন তিনি’।
বিজ্ঞাপন
রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নিজাম উদ্দিন আহাম্মেদ রফিকুল ইসলামের হাতে ২০০ বাঁশি ও ৬০ বক্স পিপারমেন্ট লজেন্স তুলে দেন, যা তিনি (রফিকুল ইসলাম) প্রায় এক বছর বিক্রি করতে পারবেন। লজেন্স ও বাঁশি পেয়ে অনেক খুশি রফিকুল ইসলাম।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৭১ বছর বয়সী রফিকুল ইসলামের বাড়ি শরীয়তপুর সদর উপজেলার ভুচূড়া গ্রামে। ১৯৫২ সালের দিকে অতি দরিদ্র পরিবারে জন্ম তার। তার বাবার নাম মৃত হোসেন মুন্সি। তার বয়স যখন ৪ তখন টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হন তিনি। গরিব বাবার পক্ষে চিকিৎসা করানো সম্ভব না হওয়ায় তাকে হারাতে হয়েছে দুই চোখ। তবে হেরে যাননি তিনি। ১০ বছর বয়স থেকে শুরু হয় তার জীবনসংগ্রাম। ভিক্ষাবৃত্তিকে ভীষণভাবে অপছন্দ করায় শুরু করেন কাজের সন্ধান। এরপর তিনি রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন গণপরিবহনে ঘুরে ঘুরে লজেন্স বিক্রি করতে থাকেন। ১৯৭৩ সালে লজেন্স বিক্রির কোনো একসময় পরিচয় হয় এক ব্যক্তির সঙ্গে। তার কাছ থেকেই রপ্ত করেন বাঁশি বাজানো। এরপর বাঁশি বাজিয়ে লজেন্স বিক্রি করা শুরু করেন, যা এখন পর্যন্ত ধরে আছেন। তার সংসারে স্ত্রী রোকেয়া বেগম, ছেলে আব্দুর রহিম ও সোহাগ মুন্সি রয়েছেন। যদিও ছেলেরা বিয়ের পরে সংসার নিয়ে আলাদা থাকছেন।
বিজ্ঞাপন
রফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ৪ বছর বয়সে টাইফয়েড জ্বরের কারণে আমি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়ে যাই। আমি শুনেছি ভিক্ষা করা আল্লাহ পছন্দ করেন না। তাই নিজেই কাজের সন্ধান করে লজেন্স বিক্রি শুরু করি। বয়স হয়ে যাওয়ায় প্রতিদিন এখন আর লজেন্স বিক্রি করতে পারি না। তাছাড়া একেবারে অনেক লজেন্স আর বাঁশি কেনার সামর্থ্য আমার নেই। আমার জীবনসংগ্রামের কথা ঢাকা পোস্ট প্রকাশ করার পর ইউএনও স্যার আমার খোঁজখবর নিয়েছেন। স্যার আমাকে বাঁশি ও লজেন্স ক্রয় করে দিয়েছেন। সাংবাদিক, ইউএনও এবং ডিসি স্যারকে ধন্যবাদ। আমি সবার জন্য দোয়া করি।
শরীয়তপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র ঢাকা পোস্টকে বলেন, রফিকুল ইসলাম একজন অদম্য মানুষ। তিনি সমাজের মানুষের জন্য উদাহরণস্বরূপ। তিনি দুই চোখ হারিয়েও ভিক্ষাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ না করে লজেন্স ও বাঁশি বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন। রফিকুল ইসলামকে নিয়ে প্রচারিত সংবাদটি আমাদের নজরে এলে তাকে আমার কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে আসি। রফিকুল ইসলামকে আমরা নগদ অর্থ দিতে চাইলে উনি নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বিক্রির জন্য লজেন্স ও বাঁশি কিনে দিতে বলেন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে এক বছরব্যাপী বিক্রির জন্য লজেন্স ও বাঁশি কিনে দিয়েছি।
সাইফুল ইসলাম সাইফ রুদাদ/এমজেইউ