নিখোঁজের ১৩ দিন পর ডোবায় মিলল যুবকের মরদেহ
বগুড়ার শাহজাহানপুরে নিখোঁজের ১৩ দিন পর সাগর (২৩) নামে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে উপজেলার গোহাইল ইউনিয়নের খাদাস গ্রাম থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার এই ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই। এদের মধ্যে মুসা নামে এক যুবকের তথ্যে সাগরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
বিজ্ঞাপন
এই হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ এখনো জানা যায়নি। তবে অপহরণের মাধ্যমে টাকা আদায় ও বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কের জের থাকতে পারে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পিবিআই।
নিহত সাগর খাদাস গ্রামের পশ্চিমপাড়ার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে এবং ট্রাকের হেলপার ছিলেন। এই ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত তিনজন হলেন- খাদাস গ্রামের মো. আবু মুছা (৩৮), মো. কালাম (২৬) ও মো. বাবলু হোসেন (২৫)। এরা সবাই সাগরের পূর্বপরিচিত।
বিজ্ঞাপন
নিহতের স্বজনরা জানান, গত ১৬ সেপ্টেম্বর বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেননি সাগর। পরে পরিবারের লোকজন আশপাশে খোঁজ করে। কয়েক দিন হয়ে যাওয়ার পরও সাগর ফিরে না আসায় গত ২০ সেপ্টেম্বর তার মা ঝরনা খাতুন ও চাচি তানিয়া শাজাহানপুর থানায় জিডি করতে যান। কিন্তু জিডি না নিয়ে থানা থেকে বের করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠে।
সাগরের চাচি তানিয়া অভিযোগ করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাগর নিখোঁজের ঘটনায় আমরা থানায় যাই জিডি করতে। কিন্তু আমাদেরকে বের করে দেওয়া হয়। আমরা অনুরোধ করার পরও জিডি নেয়নি। আমাদের দুইটা ফোনও কেড়ে নেয়। পরে আমার এলাকার একজন পুলিশে চাকরি করেন, তিনি থানায় ফোন করে বলার পর জিডি নেয়।
গোহাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলী আতোয়ার ফজু ঢাকা পোস্টকে বলেন, তিন দিন ধরে নিখোঁজ থাকার পর তারা আমাকে জানালে আমি জিডি করার পরামর্শ দিই। পরবর্তীতে আমার কাছে একটি তথ্য আসে, সাগরের সিম দিয়ে মুসা কণ্ঠ পরিবর্তন করে ফোন দেয়। পরে পিবিআই মুসাসহ আরও তিনজনকে ধরে নিয়ে যায়। যারা এই খুনের সঙ্গে জড়িত তারা নেশা করত।
এ বিষয়ে শাজাহানপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম বলেন, তারা যে অভিযোগ করেছে তার কোনো সত্যতা নেই। সাগর নিখোঁজ হওয়ার পর তার পরিবার এলাকায় খোঁজ করার একপর্যায়ে তাদের চেয়ারম্যান থানায় যাওয়ার কথা বলেন। পরে সাগরের মা ও তার চাচি গত ২৩ সেপ্টেম্বর থানায় এলে আমি দ্রুত জিডি নিয়েছি এবং বলেছি আপনারা এতদিন পরে কেন এলেন। জিডি নেওয়ার পর আমরা কাজ করতে শুরু করি। পাশাপাশি পিবিআই তদন্তকারী হিসেবে কাজ শুরু করে।
পিবিআই জানায়, জিডির পর ঘটনাটি নিয়ে ছায়াতদন্ত শুরু করেন তারা। তদন্তে মোবাইলে শেষ কথা হয় মুসার সঙ্গে। তার খোঁজ করলে পিবিআই দেখে মুসা এলাকায় নেই। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তাকে বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার হেমায়েতপুর থেকে আটক করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে সাগরকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেন মুসা। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী কালাম ও বাবুলকে বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযুক্তদের কাছ থেকে জানা যায়, ১৬ সেপ্টেম্বর রাতেই সাগরকে হত্যা করে ডোবার কাদামাটিতে পুঁতে রাখে। উপরে কচুরিপানা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। আজ শুক্রবার সকালে মুসার দেখানো স্থানে কচুরিপানা সরিয়ে সাগরের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার কাজী এহসানুল কবির বলেন, প্রথমে তারা গামছা দিয়ে সাগরকে শ্বাসরোধ করে। পরে মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য ধারালো কিছু দিয়ে কোপ দেয়। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতেই নিহতের মা বাদী হয়ে একটি নিয়মিত মামলা করেছেন। পিবিআইয়ের শিডিউলভুক্ত হওয়ায় মামলার তদন্ত আমরাও করবো।
মৃত্যুর কারণ হিসেবে কাজী এহসানুল কবির বলেন, এ বিষয়ে এখনো পুরোপুরি তদন্ত করা হয়নি। তবে অপহরণের পর টাকা আদায়ের একটি বিষয় বলেছে তারা (অভিযুক্তরা)। এছাড়া বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কের বিষয়ও আছে। আরও কিছু আছে কি না তা তদন্তের পর জানা যাবে।
এমজেইউ