রংপুরের মিঠাপুকুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে পুলিশ, সাংবাদিকসহ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে মহাসড়ক‌ সংলগ্ন উপজেলা পরিষদের সামনে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। টানা দুই ঘণ্টা পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। 

সংঘর্ষে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সরকার গ্রুপের উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান বাবু নিরঞ্জন মহন্ত, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শামীমা আখতার জেসমিন, রুহুল আমিন, রাহাত ইসলাম, শাহিদ হাসান প্রিন্স, কামরুজ্জামান, নুরে আলম সিদ্দিকী, সোহেল রানা, রাজা মিয়া, মমিন মিয়া, নাজমুল, কামরুল হাসান, আমিনুল ইসলাম মিলু, বুলবুল, হুমায়ন, শাহেদ, আমজাদ, স্বাধীন আহম্মেদ, মামুন, মেশকাত, গোলাম মিয়া, রেজাউল করিম মাস্টারসহ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। 

অপরদিকে সংসদ সদস্য এইচএন আশিকুর রহমান ও তার ছেলে রাশেক রহমানের অনুসারী গ্রুপেরও অনেক নেতাকর্মী আহত হয়েছে বলে জানান উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মোন্নাফ হোসেন। আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও দুই গ্রুপের মধ্যে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের দুটি গ্রুপ আলোচনা সভার আয়োজন করে। উপজেলা পরিষদ চত্বরে এইচএন আশিকুর রহমান এমপি ও রাশেক রহমানের সমর্থকেরা এবং মিঠাপুকুর ওভার ব্রিজের নিচে উপজেলা চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সরকারের সমর্থকেরা পৃথক পৃথক আলোচনা সভার আয়োজন করে। 

বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার ঈদগাহ মাঠ এলাকা থেকে মিঠাপুকুর ওভার ব্রিজের নিচে আয়োজিত সভাস্থলে র‍্যালি নিয়ে আসছিলেন জাকির হোসেন সরকার। এ সময় এমপি গ্রুপের লোকজন অতর্কিত হামলা চালায় বলে জানান জাকির হোসেন সরকার। মুহূর্তেই মিঠাপুকুর উপজেলা সদর এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষ চলাকালে দু-গ্রুপের লোকজন ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। এতে পুলিশ, আনসার, সাংবাদিক ও পথচারীসহ দুই গ্রুপের শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছে। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। 

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের তৎপরতায় রংপুর জেলা থেকেও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং সংঘর্ষে চলে। অবশেষে প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে সন্ধা ৭টার দিকে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। এ ঘটনার পর থেকে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে ওই এলাকায়।

এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সরকার বলেন, ইউএনও এবং ওসির সঙ্গে আজকের কর্মসূচির বিষয়ে কথা বলেছি। তারা মহাসড়কের ওভার ব্রিজের নিচে সমাবেশ করতে বলেছিলেন। আমরা সে অনুযায়ী মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে যাচ্ছিলাম। আমাদের মিছিলের শেষের অংশে পরিকল্পিতভাবে এমপি গ্রুপের লোকজন হামলা চালায়। পরবর্তীতে আমাদের সভাস্থলের চেয়ার ভাঙচুর ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে আমাদের অর্ধশত কর্মী-সমর্থক আহত হয়েছেন। 

এমপি আশিকুর রহমানের অনুসারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক সভাপতি মোজাম্মেল হক মিন্টু মিয়া বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের নিয়ে উপজেলা চত্বরে অবস্থান করছিলাম। এ সময় অপর গ্রুপের একটি র‌্যালি মহাসড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় আমাদের লোকজনের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। মুহূর্তেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। সংঘর্ষে আমাদের অনেক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।

উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ বলেন, আমাদের অনেকেই আহত হয়েছেন। এই মুহূর্তে সংখ্যা বলতে পারছি না। তবে শরিফ, রাব্বি হাসান, মেহেদী, জিয়ন, শিহাব, রাখিবুল, সৌদিক, ইকবাল, রুবেলসহ অনেকেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আহতদের কেউ কেউ প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

এদিকে সন্ধ্যা ৭টার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে উপজেলা চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সরকারের নেতৃত্বে মিঠাপুকুর ওভার ব্রিজের নিচে আলোচনা সভায় প্রতিবাদ জানান নেতাকর্মীরা। 

অপরদিকে এইচএন আশিকুর রহমান এমপি ও রাশেক রহমানের সমর্থকেরা মহাসড়কে একটি প্রতিবাদ মিছিল শেষে উপজেলা চত্বরে সমাবেশ করেন। 

এ বিষয়ে মিঠাপুকুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজার রহমান বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় পুলিশসহ অনেকেই আহত হয়েছেন। আমি নিজেও হামলায় আহত হয়েছি। বর্তমানে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। 

মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রকিবুল হাসান বলেন, জনগণের জানমালের নিরাপত্তার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। 

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর