করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে কঠোর নিষেজ্ঞাধা জারি করা হয়েছে। সারাদেশে করোনা সংক্রমণ ঝুঁকি ঠেকাতে চলছে সরকার-আরোপিত সাতদিনের লকডাউন। এ পরিস্থিতিতে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানতে প্রশাসনের পাশাপাশি মাঠে নেমেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।  

বুধবার (৭ এপ্রিল) দুপুরে রংপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান সিদ্দিকী রনির নেতৃত্বে নগরীর শাপলা চত্বর, জাহাজ কোম্পানী মোড়, পায়রা চত্বরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পথচারী, দোকানদার, অটোরিকশা ও ভ্যান চালকদের মাঝে মাস্ক বিতরণ করা হয়। এছাড়াও সংগঠনটির পক্ষ থেকে নগরীতে মাইকিং বের করা হয়।

এর আগে সকালে নগরীর বেতপট্টিস্থ কার্যালয় থেকে সচেতনতামূলক মাইকিং বের করে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক রমজান আলী তুহিনের নেতৃত্বে সুপার মার্কেট, প্রেসক্লাব, সেন্ট্রাল রোড, বেতপট্টি, স্টেশন রোড এলাকায় মাস্ক বিতরণ করা হয়।

এছাড়াও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন উই ফর দেম, আমরাই পাশে রংপুর, চলো স্বপ্ন ছুঁই, তারুণ্যের আলোসহ বেশ কিছু সংগঠন নগরীর বিভিন্ন এলাকাতে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে। এসব সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকরা ফেস মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, লিফলেট বিতরণের পাশাপাশি বিভিন্ন যানবাহনে জীবানুনাশক স্প্রে ছিটিয়েছে। কোথাও কোথাও ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে রং দিয়ে সুরক্ষা মার্কিং করে দিয়েছে।  

এদিকে রাজনৈতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ছাড়াও রংপুর জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও র‌্যাব-১৩ এর পক্ষ থেকে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ কার্যকর করতে তৎপরতা দেখা গেছে। নগরীর বিভিন্ন হাট বাজার, গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও মোড়ে মোড়ে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে টহল বাড়িয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।  

বুধবার বিকেল চারটা থেকে র‌্যাব-১৩  নগরীর শাপলা চত্বর, স্টেশন রোড, লালবাগসহ বিভিন্ন এলাকাতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে। এতে স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে বেড়ানো মানুষদের মাস্ক পরিধানে উদ্বুদ্ধ করেন র‌্যাব সদস্যরা। রাস্তায় চলাচল করা ব্যক্তিদের দেওয়া হয় মাস্ক ও লিফলেট। একই সঙ্গে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে বেপরোয়াভাবে চলাফেরা করার দায়ে অনেককেই সাময়িক শাস্তি ও মুচলেখায় ছেড়ে দেন তারা।

র‌্যাব-১৩ এর অধিনায়ক রেজা আহমেদ ফেরদৌস ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে র‌্যাব-১৩ মাঠে কাজ করছে। যারা জরুরি কাজে নগরীতে কিংবা হাটে-বাজারে আসছেন, তাদের স্বাস্থ্যবিধি মানাতে মাইকিংসহ সচেতনতামূলক কার্যক্রম চলছে। করোনার প্রথম ঢেউ মোকাবেলার কৌশলকে সামনে রেখে র‌্যাবের সদস্যরা অদম্য সাহস নিয়ে দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় কাজ করে যাচ্ছে। সবাই সচেতন হলে আমরা দ্রুত করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারব।

রংপুর জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদ হাসান মৃধা ঢাকা পোস্টকে জানান, জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ এবং সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রতিদিন বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। যারা নির্দেশনা অমান্য করছে, তাদের সতর্ক করা হচ্ছে। অনেককে জরিমানাও করা হয়েছে। ক্রেতা-বিক্রেতার দূরত্ব ৩ ফুট বজায় রাখতে দোকানে দোকানে রশি, ফিতা দিয়ে প্রতিবন্ধক তৈরি করতে ব্যবসায়ীদের উদ্ধুদ্ধ করা হয়েছে।  

তিনি আরও জানান, সাধারণ মানুষের মধ্যে উদাসীনতা বেশি। করোনা সংক্রমণ ঝুঁকি যে দিন দিন ভয়াবহ দিকে যাচ্ছে, তা নিয়ে সচেতনতা নেই। সবার মধ্যে বেপরোয়া ভাব। এভাবে চলতে থাকলে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে না। জীবন জীবিকার প্রয়োজনে আমাদেরকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বের হতে হবে। কষ্ট হলেও সরকারের নির্দেশনা মানতে হবে।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমএএস