টাকা চুরির অপবাদ দিয়ে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আশরাফুল ইসলাম (২০) নামের এক রেস্টুরেন্ট শ্রমিকের শরীরে গরম ছ্যানি দিয়ে ছেঁকা ও মারধরের অভিযোগ উঠেছে রেস্টুরেন্টটির মালিকের বিরুদ্ধে। জীবন রক্ষায় আশরাফুল কোনোমতে নিজ জেলা গাইবান্ধায় ফিরে এসেছেন।

বুধবার (৭ এপ্রিল) সকালে তাকে গুরুতর অবস্থায় গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনাটি ঘটেছে ৫ এপ্রিল ঢাকার ধানমন্ডি এলাকার মিতালী রোডের কিডস্ জি রেস্টুরেন্টে (অনলাইনে পার্সেল বিক্রি)।

আশরাফুল ইসলামের বাড়ি গাইবান্ধা সদর উপজেলার বোয়ালি ইউনিয়নের ফলিয়া গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের আজিজ মিয়ার ছেলের। ঘটনার পর গতকাল ৬ এপ্রিল রাতে শরীরে ক্ষত নিয়ে অতিকষ্টে আশরাফুল গাইবান্ধার নিজ বাড়িতে ফেরেন।

৫ এপ্রিল রেস্টুরেন্ট থেকে ৮ হাজার চুরির অপবাদ দেওয়া হয় আশরাফুলকে। এ নিয়ে চাপ দেওয়া হলে বিষয়টি অস্বীকার করেন আশরাফুল। পরে তাকে কাঠ দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। এরপর রেস্টুরেন্টের মালিক রুহিত মিয়া তার সহযোগী মিজানুরকে সঙ্গে নিয়ে প্লাস দিয়ে তার হাতের নখ তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেন। পরে গরম ছ্যানি দিয়ে তার শরীর বিভিন্ন স্থানে ছেঁকা দেন।

হাসপাতালে ভর্তি আশরাফুল ইসলাম এমন অমানবিক ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন ঢাকা পোস্টকে। তিনি বলেন, আমাকে প্রথমে রুমের ভেতরে আটকে রাখা হয়। পরে কাঠের টুকরা দিয়া মারতে থাকে। হাতের আঙুলে প্লাস দিয়া চাপ দিছে। গরম ছ্যানির ছেঁকা দিয়েছে। পরে বলেছে, বল, তুই টাকা নিছিস, যতক্ষণ স্বীকার না করবি, ততক্ষণ তোর মাইর চলবে। আমি টাকা নেই নাই, এ কথা বলছি। হাতে-পায়ে ধরছি মালিকের, তবু তাদের মন গলেনি। পরে জীবন বাঁচাতে টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছি।

আশরাফুল বলেন, দোকানের মালিক জোর করে সাদা কাগজে আমার স্বাক্ষর নিছে। স্বাক্ষর ও চুরি স্বীকার করার ভিডিও করেছে। মারধরের কোনো ভিডিও করে নাই। এরপর বলেছে, বাড়িতে যাইয়া কোনো প্রকার সমস্যা করবা, তোমার ভিডিওটা ভাইরাল করে দেব।

কতদিন ধরে ওই রেস্টুরেন্টে কাজ করছেন, এ প্রশ্নে আশরাফুল বলেন, আমার বাড়ির পাশের রাকিব নামের একজন কাজ দিছে। আমি মাত্র চার দিন হলো সেখানে কাজ নিছি।

ছাড়া পেলেন কীভাবে, এমন প্রশ্নে আরশাফুল বলেন, রেস্টুরেন্টের মালিক রুহিত জোর করে ভিডিও জবানবন্দি ও সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেন। তবে টাকা না দিলে তো ছাড়বে না। পরে বাড়িতে ফোন করে ৮ হাজার টাকা আনিয়ে রুহিতকে দিয়ে ছাড়া পাই।

এ বিষয়ে গাইবান্ধা সদর হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক সুজন পাল বলেন, রোগীর পিঠে ও হাতে গরম ছেঁকার একাধিক চিহ্ন রয়েছে। বর্তমানে তার অবস্থা ভালো আছে। ভালোভাবে সেরে উঠতে ১০ থেকে ১২ দিন সময় লাগতে পারে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজার রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, যেহেতু ঘটনাস্থল ঢাকায়। তাই মামলা সেখানকার থানায় অথবা আদালতে করতে হবে। তিনি আরও বলেন, বিষয়টি জানার পর হাসপাতালে আশরাফুলের খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তার সঠিক চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। তার পরিবারকে সব ধরনের আইনি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

রিপন আকন্দ/এনএ