ফরিদপুরের সালথায় সহিংসতার ঘটনায় নতুন করে আরো চারটি মামলা করা হয়েছে। আগের মামলাসহ পাঁচ মামলায় অভিন্ন ৩ থেকে ৪ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) পর্যন্ত ঘটনার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে পুলিশ ২৬ জনকে গ্রেফতার করেছে।

যে পাঁচটি মামলা করা হয়েছে, তাতে নাম উল্লেখ করা হয়েছে ২৬১ জনের। আর অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ৩ থেকে ৪ হাজার জনকে। নতুন যে চারটি মামলা হয়েছে, তার একটি করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা বাচ্চু মাতুব্বর। এ মামলায় ২৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৭০০ থেকে ৮০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

একটি মামলা করেছেন ইউএনওর গাড়িচালক মো. হাশমত আলী। তিনি ৫৮ জনের নাম উল্লেখ করেছেন এবং ৩ থেকে ৪ হাজার অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। 

আরেকটি মামলা করেছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের নিরাপত্তারক্ষী সমীর বিশ্বাস। এ মামলায় ৪৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং ৩ থেকে ৪ হাজার ব্যক্তিকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। 

অপর মামলাটি করেছেন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) গাড়িচালক মো. সাগর সিকদার। এ মামলায় ৪২ জনের নাম উল্লেখ করে ৩ থেকে ৪ হাজার ব্যক্তিকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

এর আগে বুধবার (৭ এপ্রিল) সালথা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান বাদী হয়ে ৮৮ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৪ হাজার ব্যক্তিকে অজ্ঞাতনামা দেখিয়ে থানায় হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে প্রথম মামলাটি করেন। 

ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও তদন্ত) জামাল পাশা জানান, সালথায় সহিংসতায় জড়িত সন্দেহে আরও ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে গ্রেপ্তারের সংখ্যা দাঁড়াল ২৬। এর মধ্যে ১১ জনকে বুধবার ১০ দিন করে রিমান্ড চেয়ে আদালতে সোপর্দ করা হলে আদালত প্রত্যেকের দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বৃহস্পতিবার বাকি ১৫ জনকে সাত দিন করে রিমান্ড চেয়ে জেলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে সোপর্দ করা হয়।

এদিকে ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় গত সোমবার রাতের সহিংস তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা বৃহস্পতিবার পরিদর্শনে আসেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এমপি লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, মো. আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও এমপি মাহবুবুল আলম হানিফ, আফম বাহাউদ্দিন নাসিম, সাংগঠনিক সম্পাদক ও এমপি মির্জা আজম, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার দীলিপ বড়ুয়াসহ নেতারা। 

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা স্থানীয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে নিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ অফিস, সরকারি বাসভবন ঘুরে দেখেন। এর আগে উপজেলা চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। সেখানে বক্তব্য দেন নেতারা।

এ সময় ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার, পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবল চন্দ্র সাহা, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হোসেনসহ প্রশাসনের কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, সোমবার (৫ এপ্রিল) সন্ধ্যায় করোনা মোকাবিলায় কঠোর বিধিনিষেধ কার্যকর করতে দুই আনসার সদস্য ও ব্যক্তিগত সহকারীকে নিয়ে সালথা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মারুফা সুলতানা খান হিরামণি ফুকরা বাজারে যান। সেখানে তিনি যাওয়ার পর মানুষের জটলা সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় তিনি ওই স্থান থেকে ফিরে আসেন এবং সেখানে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল পাঠান। ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে উত্তেজিত জনতা এসআই মিজানুর রহমানের ওপর হামলা চালান। এতে তার মাথা ফেটে যায়।

পরে স্থানীয় জনতা পুলিশের গুলিতে দুজন নিহত ও বাহিরদিয়া মাদরাসার মাওলানা আকরাম হোসেন এবং জনৈক আরেক মাওলানার গ্রেফতারের গুজব ছড়িয়ে দেয়। গুজবে কান দিয়ে হাজারো মানুষ এসে থানা ঘেরাও করে। সেই সঙ্গে উপজেলা পরিষদ, থানা, সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বাসভবন, উপজেলা কৃষি অফিস, সাবরেজিস্ট্রার অফিস, উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ সময় ইউএনওর গাড়ি ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) গাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সালথা উপজেলা সদর এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

পরে সালথা থানা পুলিশের পাশাপাশি ফরিদপুর, বোয়ালমারী, ভাঙ্গা ও নগরকান্দা পুলিশ এবং র‌্যাব ও আনসার সদস্যরা যৌথভাবে ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আট সদস্যসহ আহত হন ২০ জন। তাদের মধ্যে জুবায়ের হোসেন (২৫) ও মিরান মোল্যা (৩৫) নামের দুই যুবক চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

বি কে সিকদার সজল/এনএ