গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে চাঞ্চল্যকর চার বছরের শিশু বায়েজিদ হত্যায় জড়িত সেরেকুল নামের এক ব্যক্তি গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন। শনিবার (১৪ অক্টোবর) রাত ৮টার দিকে উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের বালুখোলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

সেরেকুলের মৃত্যুর বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক মুন্তাসির মামুন শুভ। তিনি জানান, ওই ব্যক্তিকে আমরা মৃত অবস্থায় পেয়েছি। হাসপাতালে নেওয়ার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।

নিহত সেরেকুল ওই গ্রামের মজিবর রহমানের সন্তান ও শিশু বায়েজিদ হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাকিব হাসান ওরফে রোমানের (১৯) বাবা।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, শনিবার রাত সাড়ে রাত ৮টার দিকে উপজেলার মনোহরপুর ঘোড়াবান্দা চৌরাস্তা বাজারের একটি হোটেলে সেরেকুল অবস্থান করছে- এমন খবরে বালুখোলা গ্রামের সহস্রাধিক উত্তেজিত নারী-পুরুষ সেখানে গিয়ে তাকে মারধর শুরু করে। এতে সেরেকুলের মৃতপ্রায় অবস্থা হলে তারা চলে যায়। পরে স্থানীয়দের খবরে পলাশবাড়ি থানা পুলিশ এসে সেরেকুলকে গাইবান্ধা জেলা হাসপাতালে পাঠালে রাস্তায় তার মৃত্যু হয়।

গাইবান্ধার সহকারী পুলিশ সুপার (সি সার্কেল) উদয় কুমার সাহা বলেন, মুমূর্ষু সেরেকুলকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠিয়েছি। পথিমধ্যেই তার মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করা হয়েছে। অন্য কোনো বিষয় আছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত ৮ মে বিকেলে উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের তালুক ঘোড়াবান্দা বালুখোলা গ্রামে বাড়ির উঠানে খেলার সময় নিখোঁজ হয় শিশু বায়েজিদ। পরে তাকে আশপাশে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পাওয়া যায়নি। ওইদিনেই বিষয়টি হরিণাবাড়ি পুলিশ তদন্তকেন্দ্রকে অবহিত করলে রাতেই তারা বাড়ির আশেপাশের সম্ভাব্য এলাকাগুলো খুঁজে দেখে ব্যর্থ হয়।

পরে এ ঘটনায় মাইকিং করে শিশুটির পরিবার। তাতেও সন্ধান না মেলায় পরদিন ৯ মে মঙ্গলবার সকালে পলাশবাড়ি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে বায়েজিদের মা রায়হানা বেগম। জেলাজুড়েই মাইকিং চলে টানা দুইদিন। এতেও সন্ধান না মেলায় পরে ১০ মে শিশু বায়েজিদের মা রায়হানা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা বেশ কয়েকজনকে আসামি করে পলাশবাড়ি থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন।

নিখোঁজের ৫ দিন পর শনিবার (১৩ মে) সন্ধ্যার আগে একই এলাকার একটি ধানক্ষেত থেকে শিশু বায়েজিদের মস্তকবিচ্ছিন্ন মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় একইদিন হরিণাবাড়ি পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) বুলবুল আহমেদকে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে ক্লোজড করা হয়।

পরে মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় হরিণাবাড়ির পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ নূর আলম সিদ্দিককে। এরপর হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয় একই এলাকার সিরিকুল ইসলামের ছেলে রোমান মিয়া (১৭) ও তার বন্ধু শরিফুল ইসলামকে (১৭)। পরে তদন্তকারী কর্মকর্তা গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুইদিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন।

আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সেসময় পুলিশ জানায়, শিশু বায়েজিদের বোনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ায় ক্ষোভে এ হত্যাকাণ্ড চালায় প্রেমিক রোমান।

পলাশবাড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরজু মো.সাজ্জাত বলেন, সেরেকুল ওই মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ছিল না। কিন্তু আমাদের তদন্তে হত্যাকাণ্ডে তার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়।

রিপন আকন্দ/এমজে