মো. মিনহাদুজ্জামান লীটন

বগুড়ার সোনাতলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মিনহাদুজ্জামান লীটনের বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে ছুটি না নিয়ে বিদেশ সফরের অভিযোগ উঠেছিল। তবে অভিযোগ মিথ্যা বলে জানা গেছে। মিনহাদুজ্জামান লীটনের দাবি, পুরো নিয়ম মেনেই ছুটি নিয়ে তার অসুস্থ মাকে দেখতে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন তিনি। ছুটি শেষ হওয়ার আগেই দেশে ফিরেছেন। ছুটির আদেশের কপিও দেখিয়েছেন মিনহাদুজ্জামান লীটন।

এদিকে চলতি বছরের ১১ জুলাই স্থানীয় সরকার বিভাগের উপজেলা শাখা-২ এর যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ সাইফুল হোসেন মজুমদার স্বাক্ষরিত ছুটির আদেশের কপি পাওয়া গেছে। ওই আদেশে বলা হয়েছে, অসুস্থ মাকে দেখতে যাওয়ার জন্য সোনাতলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিনহাদুজ্জামন লীটনকে ২০২৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত অথবা ৩০ দিনের ছুটি দেওয়া হলো।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোনাতলা উপজেলা চেয়ারম্যান মিনহাদুজ্জামান লীটনের স্বজনরা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন। তিনি বছরে দুয়েকবার তাদের সঙ্গে দেখা করতে যান। গত ২২ সেপ্টেম্বর তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বেড়াতে যান। ১৪ অক্টোবর তিনি দেশেও ফিরেছেন। কিন্তু কার্যালয়ে তার অনুপস্থিতিতে ছুটি ছাড়াই বিদেশ ভ্রমণের গুজব ছড়িয়ে পড়ে।

ছুটির বিষয়টি নিশ্চিত করে সোনাতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাবেয়া আফসার সাময়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি গত ১৯ সেপ্টেম্বর উপজেলায় যোগদান করেছি। এ জন্য ছুটির আদেশের কপি আমার নজরে পড়েনি। এমনকি তার সঙ্গে আমার দেখাও হয়নি। তবে আমি জেনেছি তিনি স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে ছুটি নিয়েই যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন। গতকাল দেশেও ফিরেছেন।

তবে ছুটি সংক্রান্ত কোনো তথ্য উপজেলায় কেউ জানে না বলে দাবি করেছেন প্যানেল চেয়ারম্যান-১ জাকির হোসেন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী চেয়ারম্যান ছুটি নিলে মন্ত্রণালয় থেকে আমাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের চিঠি দেওয়া হত। কিন্তু এখন পর্যন্ত মন্ত্রণালয় থেকে কোনো চিঠি পায়নি আমি। ছুটি ছাড়া যাওয়ায় তার অবর্তমানে উপজেলা পরিষদের সব কাজ বন্ধ আছে। প্রতিদিন অসংখ্য লোকজন এসে ঘুরে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, সাধারণত প্রতি বছর দুয়েকবার উপজেলা চেয়ারম্যান যুক্তরাষ্ট্রে যান। সেখানে তার আত্মীয়-স্বজন আছেন। প্রতিবারই তিনি ছুটি নেন কিন্তু এবারই ছুটি ছাড়া বিদেশে গেছেন। আমাদেরও কিছু জানাননি।

ছুটির আদেশের কপি 

সোনাতলা উপজেলার চেয়ারম্যান মিনহাদুজ্জামান লীটন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সোনাতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির সভাপতি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে মেজবাউল হক জুলু নামের এক প্রার্থীকে সমর্থন করেছিলেন মিনহাদুজ্জামান লীটন। তবে বিজয়ী হন জাকির হোসেন। তখন থেকে মিনহাদুজ্জামান লীটন ও জাকির হোসেনের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। পরবর্তীতে উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি নিয়েও তাদের মধ্যে মনোমালিন্য রয়েছে।

এদিকে সোনাতলা উপজেলার চেয়ারম্যান মিনহাদুজ্জামান লীটনও এসব আক্রোশের কথা জানান। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি মন্ত্রণালয় থেকে ৩০ দিনের ছুটি নিয়েছি। ২২ দিন ছুটি কাটিয়ে দেশে ফিরেছি। এখনো আট দিন ছুটি আছে আমার। অনেক সাংবাদিক বিষয়টি যাচাই না করেই আমার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রচার করেছেন। আমি প্রতি বছর আমার ভাই ও মাকে দেখতে যাই। আমি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। আইন কি আমি জানি না? তারা আক্রোশ থেকে এই সংবাদটি প্রচার করল যে আমি ছুটি না নিয়েই দেশের বাইরে গেছি। আর স্থানীয় সরকারের বগুড়ার উপপরিচালকও বলেছেন আমার ছুটি ছিল না। আমার যদি ছুটি নাই থাকে, তাহলে আমার বিরুদ্ধে তিনি ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কেন? নিয়ম অনুযায়ী ছুটি ছাড়া বিদেশে গেলে তো আমাকে বরখাস্ত করার কথা। তারপর চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথা।

এসব বিষয়ে জানতে বগুড়ার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মাসুম আলী বেগকে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। পরে উপজেলা চেয়ারম্যানের ছুটি ছাড়াই বিদেশে যাওয়ার বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা এমন প্রশ্ন করে খুদেবার্তা পাঠানো হলে মাসুম আলী বেগ বলেন, আমার জানামতে তার (মো. মিনহাদুজ্জামান লীটন) কোনো ছুটির আবেদন আমাদের কাছে নেই। এরকম হলে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন যাবে।

আসাফ-উদ-দৌলা নিওন/এমজেইউ