রংপুরে প্রতিদিন গড়ে আক্রান্ত ১৩, বছরে ৪২৭১
রংপুরে করোনার উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে শুক্রবার সিটি বাজারের সামনের যানজটের দৃশ্য
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ ঝুঁকির লাগাম টেনে ধরতে দিন দিন ব্যর্থ হচ্ছে রংপুর। এতে করে জেলার পরিস্থিতি এখন উদ্বেগজনক। স্বাস্থ্যবিধি না মানাসহ সরকারি বিধিনিষেধ অমান্য করে বেপরোয়া চলাফেরায় ক্রমাগত বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা।
গত এক সপ্তাহে রংপুর জেলায় করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ১০০ জন। এক বছরে রংপুর জেলায় মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪ হাজার ২৭১ জন। এদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৪ হাজার ২৯ জন। করোনা আক্রান্ত হয়ে ৭৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা রংপুর বিভাগের আট জেলার মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শনাক্ত।
বিজ্ঞাপন
রংপুর বিভাগে সবচেয়ে বেশি শনাক্ত ও মৃত্যু দিনাজপুর জেলায়। সম্প্রতি সারাদেশের মধ্যে ৩১ জেলাকে করোনাভাইরাসের উচ্চ সংক্রমণ জেলা হিসেবে দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে রংপুর ও নীলফামারী জেলা রয়েছে। যার মধ্যে রংপুরের অবস্থান ২৭ নম্বরে।
রংপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. হিরম্ব কুমার রায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, রংপুরে গত এক সপ্তাহে (০১ এপ্রিল হতে ০৮ এপ্রিল) গড়ে প্রতিদিন ১৩ জনেরও বেশি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। যার মধ্যে রংপুর মহানগর এলাকায় মারাত্মকভাবে বেড়ে চলেছে করোনা রোগী। আক্রান্তদের মধ্যে পুলিশ, র্যাব, চিকিৎসক ও নার্সসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা সংশ্লিষ্টরা রয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
রংপুর মেডিকেল কলেজের করোনা শনাক্তকরণ (পিসিআর) ল্যাবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২ এপ্রিল থেকে ৮ এপ্রিল পর্যন্ত সাতদিনে ১ হাজার ৩০৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে ২০৬ জনের করোনা পজিটিভ আসে। সাতদিনের মোট শনাক্তের মধ্যে রংপুর জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা শতাধিক। যা অন্য জেলার চেয়ে বেশি।
জেলায় প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছিল ২০২০ সালের ৪ এপ্রিল। এরপর থেকে করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। এক বছর চারদিনে (০৮ এপ্রিল পর্যন্ত) রংপুর জেলায় করোনা রোগীর সংখ্যা ৪ হাজার ২৭১ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৭৩ জনের। সুস্থ হয়েছেন ৪ হাজার ২৯ জন। বাকিরা এখন হাসপাতাল ও বাসায় চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার (০৮ এপ্রিল) বিভাগের আট জেলার মধ্যে রংপুরে ২০ জন, গাইবান্ধায় ১০, লালমনিরহাটে চারজন এবং দিনাজপুর ও নীলফামারীতে একজন করে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। ওই দিন রংপুর মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে ১৮৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৩৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এ নিয়ে বিভাগে ১৬ হাজার ৭০৪ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৩১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট ১৫ হাজার ৭৩০ জন সুস্থ হয়েছেন।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. আহাদ আলী বলেন, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দিনাজপুুরে ৪ হাজার ৯৮০ জন আক্রান্ত ও ১১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, রংপুরে ৪ হাজার ২৭১ জন আক্রান্ত ও ৭৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, ঠাকুরগাঁওয়ে ১ হাজার ৫৭৫ জন আক্রান্ত ও ৩৪ জনেরমৃত্যু হয়েছে, গাইবান্ধায় ১ হাজার ৫৬৭ জন আক্রান্ত ও ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, নীলফামারীতে ১ হাজার ৪৪১ জন অক্রান্ত ও ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে, কুড়িগ্রামে ১ হাজার ৫৯ জন আক্রান্ত ও ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, লালমনিরহাটে ৯৯৬ জন আক্রান্ত ও ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে, পঞ্চগড়ে ৮১২ জন আক্রান্ত এবং ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
করোনা প্রতিরোধে রংপুরে গঠিত নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক খন্দকার ফখরুল আনাম বেঞ্জু ঢাকা পোস্টকে বলেন, মানুষের বেপরোয়া চলাফেরা এবং স্বাস্থ্যবিধি না মানায় করোনা এখন ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে। এ পরিস্থিতিতে যত বেশি নমুনা পরীক্ষা করা হবে, তত বেশি শনাক্ত বাড়ছে। সচেতনতা, সতর্কতা এবং সরকারি নির্দেশনা মেনে না চললে করোনার হটস্পটে পরিণত রংপুরে ভয়াবহ বিপর্যয় মেনে আসবে।
রংপুর জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, করোনার সংক্রমণ ঝুঁকিরোধে এবং সরকারি নির্দেশনা কার্যকর করতে মাঠে জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি পুলিশ ও র্যাব কাজ করছে। মাস্ক ব্যবহার ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। পাশাপাশি জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম ও নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা হচ্ছে। সবার মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি ও সরকারি বিধিনিষেধ মেনে চলার প্রবণতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এএম