বিয়ের প্রলোভনে ডেকে নিয়ে নারীকে শ্বাসরোধে হত্যা
রাজবাড়ীর কালুখালীতে ধানক্ষেত থেকে ফাহিমা (৪১) নামে এক নারীর মরদেহ উদ্ধারের ১২দিন পর হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনসহ মূল অভিযুক্ত আব্দুর রহিম মন্ডলকে (৫৬) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) উপজেলার বড়ইচড়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা করা হয়।
বুধবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) রেজাউল করিম।
বিজ্ঞাপন
ফাহিমা ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার তুজারপুর গ্রামের সেকেন ফকিরের মেয়ে। গ্রেপ্তার আব্দুর রহিম মন্ডল পাংশা উপজেলার জাগিরকয়া গ্রামের মৃত তাছের আলী মন্ডলের ছেলে।
গত ৫ অক্টোবর জাতীয় জরুরিসেবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে খবর পেয়ে সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে কালুখালী উপজেলার কাওয়াখোলা এলাকায় ধানক্ষেতের ভেতর থেকে অজ্ঞাত পরিচয় এক নারীর অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় কালুখালী থানা পুলিশ বাদী হয়ে হত্যা মামলা করে।
বিজ্ঞাপন
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিম জানান, জরুরিসেবা ৯৯৯ থেকে সংবাদ পাওয়ার পর পুলিশ ধানক্ষেত থেকে অজ্ঞাত পরিচয় এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করে। মরদেহটির পরিচয় শনাক্তে কোনো ধরনের তথ্য ছিল না। স্থানীয়ভাবে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ, মাইকিং, সংবাদপত্র ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচারণা চালানো সত্ত্বেও মরদেহের পরিচয় পাওয়া যায়নি। পরে কালুখালী থানায় হত্যা মামলা করে ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত ও নিবিড় তদন্ত শুরু করে পুলিশ। বিস্তারিত ও নিবিড় তদন্তের মাধ্যমে হত্যার মূল রহস্য উদ্ঘাটন করে হত্যায় জড়িত আব্দুর রহিম মন্ডলকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি আরও জানান, আসামি রহিম মন্ডল ও ফাহিমা তিন বছর আগে একসঙ্গে কাতারে থাকতেন। কাতারে থাকা অবস্থায় ফাহিমা রহিম মন্ডলের কাছ থেকে প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার টাকা ধার নেন। রহিম ও ফাহিমা দেশে আসার পর তাদের মধ্যে যোগাযোগ ছিল। ফাহিমা পাওনা টাকা দিতে তালবাহানা করায় রহিম মন্ডল ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। এরপর বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে গত ৩০ অক্টোবর ফাহিমাকে ভাঙ্গা থেকে রাজবাড়ী এনে কালুখালীর সাওরাইল ইউনিয়নের কাওয়াখালী সরদার বাড়ী এলাকার ধানক্ষেতে এনে পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক গলায় ওড়না গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন এবং সব আলামত সরিয়ে ফেলেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিম বলেন, মরদেহটি উদ্ধারের পর পরিচয় শনাক্ত করা যাচ্ছিল না। আমরা মরদেহটির পরিচয় শনাক্তের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালাই। পরবর্তীতে কালুখালী থানার ওসির নেতৃত্বে একটি চৌকস টিম তদন্ত করে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনসহ আসামিকে গ্রেপ্তার করে। আসামির দেওয়া তথ্যে বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ওড়না, ভিকটিমের মোবাইল ফোন, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং ভিকটিমের ছবিসহ অন্যান্য আলামত উদ্ধার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) মুকিত সরকার, সহকারী পুলিশ সুপার (পাংশা সার্কেল) সুমন কুমার সাহা, কালুখালী থানার ওসি প্রাণবন্ধু চন্দ্র বিশ্বাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মীর সামসুজ্জামান/আরএআর