সালথায় তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন সরকারি অফিসের ধ্বংসস্তূপ ঘুরে দেখেছেন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো. খলিলুর রহমান

ফরিদপুরের সালথায় তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন সরকারি অফিসের ধ্বংসস্তূপ ঘুরে দেখেছেন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো. খলিলুর রহমান।

এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আর কোনো বক্তব্য নয়; সরাসরি অ্যাকশনে যেতে চাই। শুক্রবার (০৯ এপ্রিল) দুপুরে ধ্বংসস্তূপ পরিদর্শন শেষে এসব কথা বলেন তিনি।

খলিলুর রহমানের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার, পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামাল পাশা, সালথা উপজেলা চেয়ারম্যান মো. ওয়াদুদ মাতুব্বর, সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মাদ হাসিব সরকার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. দেলোয়ার হোসেন মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফারুকুজ্জামান ফকির মিয়া।

এদিকে সহিংসতার ঘটনায় পাঁচটি মামলা করা হয়েছে। মামলায় ২৬১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ৩ থেকে ৪ হাজার জনকে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ৪৮ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও তদন্ত) জামাল পাশা বলেন, সালথায় সহিংসতায় জড়িত সন্দেহে ৪৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন সরকারি অফিসের ধ্বংসস্তূপ ঘুরে দেখেছেন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো. খলিলুর রহমান

সোমবার (০৫ এপ্রিল) সন্ধ্যায় করোনা মোকাবিলায় কঠোর বিধিনিষেধ কার্যকর করতে দুই আনসার সদস্য ও ব্যক্তিগত সহকারীকে নিয়ে সালথা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মারুফা সুলতানা খান হিরামণি ফুকরা বাজারে যান। সেখানে তিনি যাওয়ার পর মানুষের জটলা সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় তিনি ওই স্থান থেকে ফিরে আসেন এবং সেখানে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল পাঠান। ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে উত্তেজিত জনতা এসআই মিজানুর রহমানের ওপর হামলা চালান। এতে তার মাথা ফেটে যায়।

পরে স্থানীয় জনতা পুলিশের গুলিতে দুইজন নিহত ও বাহিরদিয়া মাদরাসার মাওলানা আকরাম হোসেন এবং জনৈক আরেক মাওলানার গ্রেফতারের গুজব ছড়িয়ে দেয়। গুজবে কান দিয়ে হাজারো মানুষ এসে থানা ঘেরাও করে। সেই সঙ্গে উপজেলা পরিষদ, থানা, সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবন, উপজেলা কৃষি অফিস, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) গাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। কয়েকটি মসজিদের মাইক থেকে এবং বেশ কয়েকটি মোবাইল থেকে ফেসবুক লাইভে পুলিশের গুলিতে কয়েকজন নিহত ও মাওলানাকে গ্রেফতারের গুজব ছড়িয়ে হাজার হাজার মাদরাসাছাত্র, মুসল্লি ও জনতাকে ডেকে জড়ো করা হয় উপজেলা পরিষদ চত্বরে। এরপর দফায় দফায় হামলা চালানো হয় বিভিন্ন সরকারি দফতরে। সোমবার রাত ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত চলে এ তাণ্ডব। পরে সালথা থানা পুলিশের পাশাপাশি ফরিদপুর, বোয়ালমারী, ভাঙ্গা ও নগরকান্দা পুলিশ এবং র‌্যাব ও আনসার সদস্যরা যৌথভাবে ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আট সদস্যসহ আহত হন ২০ জন। আহতদের মধ্যে জুবায়ের হোসেন (২৫) ও মিরান মোল্যা (৩৫) নামের দুই যুবক চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। 

এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তাসলিমা আলী ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আসলাম মোল্যাকে প্রধান করে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বি কে সিকদার সজল/এএম