শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল
চোরের উৎপাত, শিশু হারানোর শঙ্কায় স্বজনরা
শরীয়তপুর ১০০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালে বেড়েছে চোরের উৎপাত। প্রতিদিনই ঘটছে ব্যাগ, টাকা, মোবাইল, স্বর্ণালঙ্কারসহ নানা জিনিসপত্র হারানোর ঘটনা। চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঠিক তদারকির অভাবেই চোরের উৎপাত বেড়েছে। এমন অবস্থায় শিশু চুরি হওয়ারও শঙ্কায় আছেন তারা।
সম্প্রতি আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত কারণে হাসপাতালে জ্বর, ঠান্ডা ও কাশিতে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বেড়েই চলছে। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, এখানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের টাকা, মোবাইল ফোন, ওষুধসামগ্রীসহ মূল্যবান জিনিসপত্র খোয়া যাচ্ছে প্রতিদিন। একদিকে শয্যা সংকট থাকায় রোগীর চাপ ও চিকিৎসা বিড়ম্বনা। অন্যদিকে হাসপাতালের অধিকাংশ সিসিটিভি ক্যামেরা অকেজো থাকায় রোগীদের ভিড়ে হাসপাতালে ঢুকে বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে চোর চক্র। এ ঘটনায় হাসপাতালে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকেই দায়ী করছেন তারা।
বিজ্ঞাপন
শরীয়তপুর সদর উপজেলার কাশিপুর থেকে তাসকিন নামের এক মাস বয়সী শিশুর চিকিৎসা করাতে এসেছেন বাবা মোরশেদ সরদার। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, তিন দিন ধরে ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি। আজ ভোররাতে আমার পাশে থাকা ব্যাগ থেকে তিন হাজার টাকা, তাসকিনের ডায়াপার ও ওষুধ চুরি হয়েছে। গ্রাম থেকে অল্প টাকা নিয়ে এসেছিলাম। এভাবে যদি চোরেরা সবকিছু নিয়ে যায় আমরা কীভাবে চলব? চোর ব্যাগ খুলে টাকা ও ওষুধ নিয়ে যাচ্ছে। কখন যে আবার শিশু চুরি করে নিয়ে যায় এই আতঙ্কের মধ্যে থাকি।
ফারিস্তা নামের ১১ মাসের শিশুকে নিয়ে গতকাল শনিবার সকালে হাসপাতালে আসেন সদর উপজেলার ডলি আক্তার। রাত ১টা অবধি জেগে থেকে মালামাল পাহারা দিয়েছেন তিনি। ভোরে বাচ্চাকে নিয়ে কক্ষের বাইরে একটু হাঁটাচলা করে আবার শয্যায় গিয়ে শুয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ পর রুমে ঢুকে ঝাড়ু দিয়ে বের হয়ে যান হাসপাতালের এক আয়া। এরপর থেকেই তার হাতব্যাগটি খোয়া যায়। ডলি আক্তারের ব্যাগের ২৬ হাজার টাকা, জাতীয় পরিচয়পত্র ও সোনালী ব্যাংকের একটি এটিএম কার্ড ছিল।
বিজ্ঞাপন
ডলি আক্তার অভিযোগ করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাসপাতালের ওই আয়া ঝাড়ু দিয়ে চলে যাওয়ার পর থেকেই আমার ব্যাগটি গায়েব হয়ে যায়। হাসপাতালের কক্ষে সিসিটিভি না থাকায় দেখতেও পারছি না কীভাবে আমার ব্যাগটি চুরি হয়েছে। আমি হাসপাতালের লোকজনকে বিষয়টি জানালে উল্টো তারা আমাকে হুমকি দিয়ে বলে, আমি যদি উপযুক্ত প্রমাণ দিতে না পারি তাহলে আমার বিরুদ্ধে হাসপাতাল থেকে মানহানির মামলা করা হবে।
সদর উপজেলার পালং ইউনিয়নের আচুড়া এলাকা থেকে এসেছেন আছিয়া বেগম। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমরা গরিব মানুষ। বাইরে চিকিৎসা করার সামর্থ্য নেই বলেই সরকারি হাসপাতালে এসেছি। এখানে আসার পর গতকাল রাতে আমার ব্যাগ থেকে পাঁচ হাজার টাকা আর একটি মোবাইল ফোন হারিয়ে যায়। এখন টাকার অভাবে ওষুধ কিনতেও পারছি না। হাসপাতালে ছোট্ট শিশুকে ভর্তি করেছি। শঙ্কায় আছি কখন আবার ভিড়ের মধ্যে টাকাপয়সার সঙ্গে বাচ্চাও চুরি হয়ে যায়।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. মিতু আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভোরে হাসপাতাল থেকে তিনজন রোগীর স্বজনদের টাকাপয়সা ও মালামাল হারিয়ে যাওয়ার বিষয়ে শুনেছি। হাসপাতালে রোগী ও তাদের স্বজনদের মূল্যবান জিনিসপত্র তাদের নিজ দায়িত্বে রাখার কথা। হাসপাতালে সিসিটিভি ক্যামেরা আছে তবে সবগুলো সচল নয়। হয়ত ওই ওয়ার্ডের সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল না। সিসিটিভি অকেজো হওয়ার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আমরা চুরির বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হাবিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, চিকিৎসা নিতে আসা সকল রোগী ও তাদের লোকজনকে মালামাল নিজ দায়িত্বে নিরাপদে রাখার জন্য বলা হয়ে থাকে। সাধারণত ভোরের দিকে চোরেরা রোগীর স্বজন সেজে চুরি করে থাকে।
আয়ার বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীর অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, না দেখে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া ঠিক নয়। যদি কেউ চোর ধরতে পারে সেক্ষেত্রে হাসপাতাল থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। হাসপাতালে আরও বেশি সংখ্যক সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে।
এমজেইউ