প্রশান্ত দেবনাথ

প্রশান্ত দেবনাথ (১৯)। দিনমজুর বাবার আদরের ছেলে। ছোট থেকেই অনেক মেধাবী। অভাবের সংসারে অনেক সময় থাকতে হয়েছে না খেয়ে। তবে মেধার জোরে সব বাধা জয় করে মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন প্রশান্ত। 

প্রশান্ত ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বড়গাঁও ইউনিয়নের বাসিন্দা দিনমজুর বির্ষম দেবনাথের ছেলে। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে প্রশান্ত সবার বড়।

২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস কোর্সের প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় মেধাক্রম ৩৯৮৮তম হয়ে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন প্রশান্ত। ভর্তি পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের মধ্যে তিনি পেয়েছেন ৬৮.২৫ নম্বর। 

শুক্রবার (৯ এপ্রিল) প্রশান্তের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, লোকজন একে একে ছুটে আসছেন তার বাসায়। কেউ ধন্যবাদ দিচ্ছেন। কেউ তার পাশে থাকার আশ্বাস দিচ্ছেন। এলাকাজুড়ে বিরাজ করছে আনন্দের বন্যা।

প্রশান্ত দেবনাথ বলেন, ছোট থেকেই ইচ্ছে ছিল একদিন ভালো একটি প্রতিষ্ঠানে পড়ব। এ লক্ষে নিরলস পরিশ্রম করে গেছি। বাবা-মায়েরও ইচ্ছে ছিল একদিন আমি চিকিৎসক হব। আমি তাদের স্বপ্ন পূরণের কথা মাথায় রেখে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। আমার বাবা একজন দিনমজুর। এমনও সময় গেছে না খেয়ে কাটিয়েছি।

বাবা-মা প্রাইভেট পড়ার টাকা দিতে পারতেন না। বিষয়টি আমি কলেজের শিক্ষকদের জানাই। তারপর থেকে শিক্ষকরা আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন। তবে আমার মামা অনেক সাহায্য করেছেন। অনলাইনে ক্লাস শুরু হলে মামা আমাকে ফোন থেকে শুরু করে সব বিষয়ে সাহায্য করেছে। 

প্রশান্ত বলেন, পড়তে বসে কখন রাত পার হয়ে সকাল হয়েছে বুঝতে পারিনি। দিনরাত এক করে বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণের লক্ষে পরিশ্রম করে গেছি। আজ বাবা-মাসহ এলাকাবাসীর মুখে যে হাসি দেখেছি সত্যি আমি ধন্য। আমি কদম রসুল স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেছি। এরপর দিনাজপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করি।

স্থানীয় বাসিন্দা জয়নাল আবেদিন, উকিল চন্দ্র, ফারুক হোসেনসহ বেশ কয়েকজন বলেন,পরিবারটি আজ খুব খুশি। শুধু তারা নয়, আমরাও অনেক খুশি। তার বাবা-মা অনেক পরিশ্রম করেছে। 

প্রশান্তের মা দ্বিপি রানী দেবনাথ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের ইচ্ছে ছিল ছেলেকে প্রতিষ্ঠিত করার। আজ আমার ছেলেকে দেখে এলাকাবাসী অনেক খুশি। ছেলের খুশি দেখে আমাদের সব কষ্ট যেন মুছে গেছে।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বড়গাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পদাক মনরঞ্জন দেবনাথ মনির ঢাকা পোস্টকে বলেন, খবরটি শুনে অনেক ভালো লেগেছে। একজন দিনমজুরের ছেলে মেডিকেলে চান্স পেয়েছে জানার পর আরও বেশি ভালো লেগেছে। প্রশান্ত শুধু তার পরিবারের স্বপ্ন না আমাদের সমস্ত বড়গাঁওবাসীর মাথা আজ উঁচু করেছে। প্রশান্তকে দেখে আমাদের এ এলাকার ছেলে-মেয়েরা পড়াশোনার প্রতি আগ্রহী হবে।

ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, একজন দিনমজুরের ছেলে মেডিকেলে চান্স পেয়েছে। বিষয়টি সত্যি অনেক আনন্দের। যদি মেডিকেলে ভর্তির বিষয়ে তার কোনো ধরনের সাহায্যের প্রয়োজন হয় তাহলে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে সাহায্য করা হবে। শুধু প্রশান্ত নয়, যারা আমাদের জেলা থেকে মেডিকেলে চান্স পেয়েছে তাদের যদি ভর্তির জন্য আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন হয় আমরা তাদের সহযোগিতা করব।  

এসপি