‘৭০ সালের বন্যায় অসংখ্য মানুষ মারা গেছে। চারদিকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হইসে। তখন খুব ভয় পাইসিলাম, কিন্তু এখন আর ভয় লাগে না। মাইকিং করলে মানুষ কিছুটা আতঙ্কিত হয়, তবে নিজেদের সহায় সম্বল রেখে যেতে চায় না। অনেকবার আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়েছি, কিন্তু ঘূর্ণিঝড় আসে নাই। বাড়ির সব জিনিসপত্র কে বা কারা নিয়ে যায়। আসলে নদীর সাথে যুদ্ধ করে বড় হইসি, তাই ঝড় জলোচ্ছ্বাস ভয় পাই না।’

মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) বিকেলে কথাগুলো বলছিলেন নোয়াখালীর হাতিয়ার বুড়িরচর ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের মামুন মার্কেট এলাকার বাসিন্দা হাজী মারফত উল্যাহ (৭০)।

তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ৭০ এর ভয়ংকর এক স্মৃতি আছে। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার পথে একটা ঘর পড়ে আছে দেখলাম। ভাবলাম মানুষ ঘরের মধ্যে মনে হয় আশ্রয় নিয়েছে এবং তারা সবাই বেঁচে আছে। কাছাকাছি গিয়ে দেখলাম কোনো সাড়া নেই। দ্রুত মানুষগুলোকে ঘর থেকে বের করলাম। তারা সবাই ঘরের মধ্যে চাপা পড়ে মারা গেছে। সেই দুঃসহ স্মৃতি  আজও মনে পড়লে আমি আঁতকে উঠি।

পাশে বসে থাকা আলাউদ্দিন ৯১ সালের বন্যার স্মৃতি উল্লেখ করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের সবার জীবন এই মেঘনা নদীকে ঘিরে। আমরা জীবিকা নির্বাহ করি এই নদী থেকে। ঘূর্ণিঝড় হলে এই নদীতেই আমরা মিশে যাই। নদীই আমাদের জীবন মরণ সাথী। ৯১ সালের বন্যা নিয়েও আমাদের স্মৃতি কম না। উপকূলে পানি বাড়লেই আমাদের ভয় বেড়ে যায়। ঘরবাড়ি না ডুবলে আমরা আশ্রয়কেন্দ্রে যাই না। 

একই এলাকার বাসিন্দা মো. সাইফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, মানুষ আতঙ্কিত কম হয়। বেশ কয়েকটা ঘূর্ণিঝড় আসবে আসবে বলে আসে নাই। সতর্ক সংকেত কেবল বাড়তে থাকে কিন্তু ঘূর্ণিঝড় আসে না। তাই উপকূলের মানুষ সাত নম্বর সংকেতকেও পাত্তা দিচ্ছে না। আল্লাহ আমাদের সকলকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করুক। এই দ্বীপের অসহায় মানুষের দিকে আল্লাহ বিশেষ নজর দিক।

হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুরাইয়া আক্তার লাকী ঢাকা পোস্টকে বলেন,  মানুষ সচেতন না হলে কি বা করার থাকে। আমি নিজে গিয়ে হাতিয়ার নলচিরা ঘাট এলাকায় মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে মাইকিং করেছি। বিভিন্ন স্থানে মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছি। জোর করে হলেও তাদেরকে বুঝাচ্ছি। আশ্রয়কেন্দ্রে সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা রয়েছে। পুলিশ সার্বক্ষণিক আশ্রয়কেন্দ্রের নিরাপত্তা দিচ্ছে।

হাসিব আল আমিন/আরএআর