গলাচিপায় রাকিব গাজী নামে এক কিশোরকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে

পটুয়াখালীর গলাচিপায় মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগে রাকিব গাজী (১৪) নামে এক কিশোরকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করে কাঁচি দিয়ে মাথার চুল কেটে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় শিশুটির বাবা-মাকেও নির্যাতন করা হয়।  শনিবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সোহেল মৃধা (৩৮) নামে এক যুবকে গ্রেফতার করেছে গলাচিপা থানা পুলিশ।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, গলাচিপার ডাকুয়া ইউনিয়নের ফুলখালী গ্রামের জুলেল মৃধার মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগে শুক্রবার (৯ এপ্রিল) সকালে কৃষ্ণপুর গ্রামের মকবুল গাজীর ছেলে রাকিব গাজীকে (১৪) ঘর থেকে ডেকে নেয় তারা। এরপর ফুলখালী রেজাউল মৃধার বাড়ির সামনে পাকা রাস্তার দক্ষিণ পাশে রাকিবকে রশি দিয়ে আম গাছের সঙ্গে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করে ফুলখালী গ্রামের জুয়েল মৃধা, রাকিব মৃধা, সোহেল মৃধা, এমাদুল মৃধা ও জাকির মৃধাসহ অজ্ঞাত আরও দুই-তিনজন। রাকিবের ওপর মধ্যযুগীয় কায়দায় তিন ঘণ্টা ধরে নির্যাতন চালায়। 

নির্যাতনের এক পর্যায়ে রাকিবের বাবা মকবুল গাজীকেও ঘর থেকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে আসে। তাকে গলায় গামছা পেঁচিয়ে ছেলের পাশে আনে এবং ছেলের সামনে তাকেও নির্যাতন করে। এতে মকবুল গাজী অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাকে বাঁচাতে স্ত্রী মোর্শেদা বেগম ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন এবং স্বামীকে (মকবুল গাজী) উদ্ধার করতে চাইলে তাকেও নির্যাতন করা হয়। এসব ঘটনা দুর্বৃত্তরা মোবাইল ফোনে ধারণ করে। 

এ ঘটনা শুনে মোর্শেদা বেগমের চাচা স্থানীয় রুহুল মোল্লা এসে রাকিবের বাঁধন খুলে দিলে তাকেও অপমান করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরে ঘটনা শুনে ডাকুয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মো. আরিফ মিয়া এসে সংশ্লিষ্ট ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রাকিব মোল্লাকে জানাতে বলেন। এর কিছু পরেই পুরো ঘটনাটি নির্যাতনকারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছেড়ে দেয়। শনিবার (১০ এপ্রিল) গলাচিপা থানায় মামলা হলে ফেসবুক থেকে ভিডিওটি মুুছে দেয় দুর্বৃত্তরা। 

ডাকুয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. আরিফ মিয়া বলেন, শিশুটির বাড়ি আমার ওয়ার্ডে। আমি ঘটনাস্থল গিয়ে ৯ নম্বরের ইউপি সদস্যকে খবর দিতে বলি। বিষয়টি আইনিভাবে মীমাংসার কথা বলেছিলাম।

ডাকুয়া ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রাকিব মোল্লা বলেন, আমি এলাকায় ছিলাম না। আমাকে এমাদুল ফোন দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছিল। কিন্তু তাকে আইন হাতে নিতে বলা হয়নি।

নির্যাতনের শিকার শিশু রাকিব বলেন, ঘর থেকে রেজাউল মৃধা ডেকে নেয়। রাস্তায় উঠার সঙ্গে সঙ্গে আমার পকেটে একটি মোবাইল ফোন সে ঢুকিয়ে দেয়। পরে একটি রশি দিয়ে আমাকে আম গাছের সঙ্গে বেঁধে বাঁশের লাঠি দিয়ে মারপিট করে। পরে লোহার রড দিয়া চোখ উঠিয়ে দেওয়ার ভয় দেখায়।

নির্যাতনের শিকার কিশোরের মা মোর্শেদা বেগম বলেন, রেজাউল ও জুয়েল মৃধাসহ ৪-৫ জন আমার ছেলে রাকিবকে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে যায়। পরে রেজাউল মৃধার বাড়িতে আম গাছের সঙ্গে হাত-পা বেঁধে মারপিট করে। আমার স্বামীকে মৃধা বাড়ির লোকজন গলায় গামছা পেঁচিয়ে নিয়ে যায়। বাপ-ছেলেকে একসঙ্গে নির্যাতন করে এবং আমার ছেলে রাকিবের মাথার চুল কাঁচি দিয়ে কেটে দেয়। আমি গেলে আমাকেও মারধর করে। 

তিনি আরও বরেন, আমি থানায় মামলা করতে গেলে তারা বাড়িতে গিয়ে হুমকি দিয়ে আসছে। মামলা করলে আমাদের  জীবন শেষ করে দেবে। আমরা বাঁচতে পারবতো? জীবন নিয়ে ভয়ে আছি। 

গলাচিপা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম আর শওকত আনোয়ার ইসলাম বলেন, কিশোরের মা মোর্শেদা বেগম বাদী হয়ে জুয়েল মৃধাসহ ৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও তিনজনের নামে একটি মামলা করেছে। এর মধ্যে মামলার প্রধান আসামি সোহেল মৃধাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। 

মহিব্বুল্লাহ্ চৌধুরী/এসপি