কৃষকের স্বপ্ন পুড়ে শেষ
ধান পুড়ে যাওয়ার পাশাপাশি চিটা হয়ে গেছে
চৈত্রের বয়ে যাওয়া গরম বাতাসে বগুড়ার ৬ উপজেলার ৮০ হেক্টর জমির বোরো ধান পুড়ে গেছে। এতে কৃষকের স্বপ্নের পাশাপাশি পুড়েছে গো-খাদ্য খড়ও।
জেলার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, গাবতলী, ধুনট, শাজাহানপুর ও সদরের বিভিন্ন এলাকায় গরম বাতাসে বোরো ধান পুড়ে গেছে বলে নিশ্চিত করেছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।
বিজ্ঞাপন
এ বছর জেলায় ১ লাখ ৮৮ হাজার ৬১৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। গরম বাতাসে ধান পুড়ে যাওয়ার ঘটনায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের খেতের পরিমাণ ও কৃষকের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সরেজমিনে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার চর কুড়িপাড়া, তিতপরল, পারতিতপরল গ্রামে দেখা যায়, গরম বাতাস আর কাল বৈশাখী ঝড়ে বোরো ধানের জমিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধানের শীষগুলোতে থাকা ধান পুড়ে গেছে। গোছাগোছা ধানের শীষ নিয়ে কৃষকরা তা দেখান। এ সময় তিতপরল গ্রামের শাহাদত, পারতিতপরল গ্রামের মোকলেছার, চান্দিনা নোয়াপাড়ার কৃষক রফিকুল জানান, এবার চৈত্র মাসের গরম বাতাস ও হঠাৎ কালবৈশাখীর তাণ্ডবে জমিতে লাগানো বোরো ধান পুড়ে গেছে ও ঝরে পড়ছে। দীর্ঘদিন ধরে তারা ধান চাষ করছেন। কিন্তু পুড়ে যাওয়ার মতো ঘটনা এবারই প্রথম তারা দেখছেন।
বিজ্ঞাপন
এদিকে বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক দুলাল হোসেন গরম বাতাসে ধান পুড়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বগুড়া জেলার ৬ উপজেলার ৮০ হেক্টর জমি গরম বাতাসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনিও এমন ঘটনা এই প্রথম দেখছেন।
তিনি আরও জানান, গত ৪ এপ্রিল ঝড়ের সময় গরম বাতাস বয়ে যায়। এই সময়টাতে ধানে ফ্লাওয়ারিং বা ধানের থোড় বের হওয়ার সময় পরাগায়ন হয়ে থাকে। ঠিক সেই সময়টাতে ধান খেতের ওপর দিয়ে প্রচণ্ড বেগে গরম বাতাস বয়ে যায়। পরাগায়নের সময় তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি বা তার ওপর দিয়ে বয়ে গেলে এ ঘটনা ঘটে থাকে।
জেলার শাজাহানপুর, গাবতলী এলাকার কৃষকরা জানান, তাদের দীর্ঘদিনের ফসল চাষে এমন ঘটনা দেখেনি। ধানের খেত পুড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কোনো কোনো খেতের ধানে চিটা আবার কোনো কোনো খেতের ধান বিবর্ণ হয়ে গেছে। এ সময় ধান গাছে ফ্লাওয়ারিং চলছিল।
বগুড়া জেলার কৃষি কর্মকর্তারা জানান, বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, গাবতলী, ধুনট, শাজাহানপুর ও সদর উপজেলার ওপর দিয়ে এই গরম বাতাস বয়ে গেছে। তবে এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ৬ উপজেলার ৮০ হেক্টর জমির বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে বলে কৃষি বিভাগ জানতে পেরেছে। গরম বাতাসে কৃষকের কপাল পুড়েছে সেই সঙ্গে পুড়েছে গো-খাদ্য খড়ও। কৃষক এবার বোরোর বাম্পার ফলনের স্বপ্ন দেখছিলেন। কিন্তু হঠাৎ বগুড়াসহ দেশের কয়েকটি জেলার ওপর দিয়ে গরম বাতাস বয়ে যাওয়াতে তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন।
গরম বাতাসে ৮০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হলেও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার তেমন কোনো ক্ষতি হবে না বলেও জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা।
সাখাওয়াত হোসেন জনি/এসপি