নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ভূঁইগড় থেকে ডিআইজি ও এসপির ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে প্রতারণা করা মো. শিহাব উদ্দিন সিদ্দিকী ওরফে দিদারুল ইসলাম রিহান (৩০) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে পলাতক রয়েছে তার দুই সহযোগী সুমন ও রক্সি।

শিহাব উদ্দিন সিদ্দিকী ওরফে দিদারুল ইসলাম রিহান চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ফটিকছড়ি গ্রামের মো. আবু তাহেরের ছেলে।

শিহাব ওরফে রিহান ফতুল্লার ভূঁইগড় এলাকায় রূপায়ণ ৪৩নং বিল্ডিংয়ের ফ্ল্যাটে বসবাস করে আসছিলেন। ভুয়া ডিআইজি ও এসপির পরিচয় ব্যবহার করে তিনি বিভিন্নভাবে ২১ লাখ ২৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন। প্রতারণার শিকার রূপায়ণ টাউন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (ডিপিএসএল) মো. শাকিল সারোয়ার ৮ নভেম্বর বাদী হয়ে শিহাব উদ্দিন সিদ্দিকী ওরফে দিদারুল ইসলাম রিহানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ২৯ আগস্ট শাকিল সারোয়ারের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে ফোন করে মো. জাহিদুল ইসলাম সাব্বির নামের একজন নিজেকে ডিআইজি পরিচয় দেন এবং বলেন শিহাব উদ্দিন সিদ্দিকী তার ছোট ভাই। শিহাব উদ্দিন নারায়ণগঞ্জ শহরে গাড়ির ইঞ্জিনের পাইকারি ব্যবসা করার সুবাদে নারায়ণগঞ্জ শহরের রূপায়ণ টাউনে একটি ফ্ল্যাট বাসা ভাড়া নিতে চায়। এর প্রেক্ষিতে রূপায়ণ টাউনের বিধি মোতাবেক মো. জাহিদুল ইসলাম সাব্বির তার ভিজিটিং কার্ড ও তার ছোট ভাইয়ের পাসপোর্টের ফটোকপি প্রদান করেন। বসবাসের শুরুতে শিহাব উদ্দিন অগ্রিম ১ লাখ টাকা জামানত প্রদান করেন। কিন্তু পরবর্তীতে নির্ধারিত ভাড়া পরিশোধ করছিলেন না।

ফলে প্রতারক শিহাব উদ্দিনের নিকট বাসা ভাড়া বাবদ ১ লাখ ৫৯ হাজার, বিদ্যুৎ বিল বাবদ ৪৮ হাজার, সার্ভিস চার্জ ১২ হাজার, গ্যাস বিল ৬ হাজার টাকাসহ মোট ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা পাওনা হয় কর্তৃপক্ষ। এছাড়া গাড়ি ও গাড়ির খুচরা যন্ত্রাংশ ক্রয়ের জন্য শাকিল সারোয়ারের কাছ থেকে ১০ অক্টোবর বেলা ১১টার দিকে রূপায়ণ টাউন সংলগ্ন আইএফআইসি ব্যাংকের সামনে থেকে শিহাব উদ্দিন ৫ লাখ টাকা ধার নেন।

এছাড়া দুই ঘণ্টার মধ্যে পরিশোধের কথা বলে ১৪ অক্টোবর চেকের মাধ্যমে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ও নগদ ৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা নেন শিহাব সিদ্দিকী। পরে শাকিল সারোয়ারকে আইএফআইসি ব্যাংক হিসাবের অ্যাকাউন্টে টাকা এনপিএসবি করার ভুয়া মেসেজ প্রেরণ করেন। কিন্তু শাকিল সারোয়ারের অ্যাকাউন্টে টাকা প্রবেশ করেনি। এছাড়া ১১ লাখ ৭৫ টাকার ইএফটিএন-এর ভুয়া মেসেজও দেয়। কিন্তু উল্লিখিত টাকাও শাকিল সারোয়ারের অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করেনি।

পরবর্তীতে শিহাব সিদ্দিকীর নিকট শাকিল সারোয়ার পাওনা টাকা চাইতে গেলে কথিত ডিআইজি (এসবি হেডকোয়ার্টার্স) মো. জাহিদুল ইসলাম সাব্বিরকে দিয়ে ফোন করিয়ে টাকা ফেরত দেবেন বলে আশ্বস্ত করেন শিহাব সিদ্দিকী। কিন্তু তিনি টাকা ফেরত দেননি।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম বলেন, এই প্রতারকদের একটি চক্র আছে। এরা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার পরিচয় দেয় এবং একটি ডিভাইস ব্যবহার করে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে কৌশলে টাকা হাতিয়ে নেন। ওই ডিভাইস ব্যবহার করার ফলে কাউকে কল দিলে মোবাইলে আমাদের প্রশাসনের নম্বর উঠে। যার ফলে সবাই প্রশাসনের লোক ভেবেই কথা বলে।

তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।

শিপন সিকদার/এমজেইউ