বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপ থেকে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’ নোয়াখালীর উপকূল অতিক্রম করেছে;  তবে চলে গেলেও উপকূলবর্তী বিভিন্ন অঞ্চলে গাছপালা ও ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে গেছে এই ঝড়।

জানা গেছে, জেলার সুবর্ণচর, কোম্পানীগঞ্জ, কবিরহাট ও দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। বেশিরভাগ এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। উপকূলজুড়ে সড়কের বিভিন্ন অংশে গাছ ভেঙে পড়েছে। এতে সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

কৃষি খাতেও ক্ষত চিহ্ন রেখে গেছে মিধিলি। হাতিয়ার নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের বাসিন্দা কেফায়েত হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিঝুমদ্বীপে আমন ধানের ব্যাপক ফলন হয়েছে। আমরা বেশিরভাগ ধান তুলতে পেরেছি তবে অনেকের ধান রয়ে গেছে। যাদের ধান হেলে পড়েছে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কৃষি বিভাগ যদি কৃষকের পাশে দাঁড়ায় তাহলে খুব উপকার হবে।

হাতিয়ার আরেক বাসিন্দা মো. আবু সালেহ সাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে হাতিয়ায় সারাদিন টানা বর্ষণ ও দমকা হাওয়া বয়ে যায়।  উত্তাল সমুদ্রের বড় বড় ঢেউ জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এছাড়া আমন ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু গাছপালা উপড়ে গেছে। অনেক কাঁচা ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে।

সুবর্ণচর  উপজেলার বাসিন্দা আরিফুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘অনেক গাছ উপড়ে পড়েছে। ফসল হেলে পড়েছে, ঘর-বাড়ি উড়িয়ে নেয়ে গেছে। আমাদের বিদ্যুৎ নেই। কারো সাথে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।’

জেলা আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে জানান, মিধিলি ইতোমধ্যেই উপকূল অতিক্রম করেছে। তবে এর কিছুটা প্রভাব রয়ে গেছে। যা নিম্নচাপ আকারে আছে। ফলে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এ বৃষ্টি ধীরে ধীরে শনিবার নাগাদ কমে যাবে।

হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুরাইয়া আক্তার লাকী বলেন,  ‘যেসব স্থানে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তাৎক্ষণিক ভাবে সেগুলোর তালিকা সংগ্রহ করেছি। এখন পর্যন্ত ৩১০ টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৯০ টি এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২২০ টি।’

নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি নোয়াখালীর জেনারেল ম্যানেজার মো. জাকির হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় চলে গেলেও বাতাস কমেনি।  খবর পেয়ে আমাদের কর্মীরা সেখানে যাচ্ছে এবং সেসব স্থানে গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। আশাকরি খুব দ্রুতই আমরা বিদ্যুৎ সেবা পৌঁছে দিতে পারবো।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহিদ হাসান খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এখনো দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করায় ক্ষতিগ্রস্তের সঠিক হিসাব জানানো সম্ভব হচ্ছে না। তবে কবিরহাট উপজেলার ১৩০ টি আধাপাকা ও কাঁচা ঘরের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমাদের আরও তথ্য প্রতিনিয়ত আসছে।’

জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বিতরণের জন্য আমাদের ২৪ লাখ টাকা এবং ৪৭৯ মেট্রিক টন চাল প্রস্তুত আছে। ঝড়ো বাতাসে কিছু কাঁচা ঘরবাড়ি, আধাপাকা বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে আমরা জেনেছি। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমরা কাজ করছি। এছাড়াও সেসব সড়কে গাছ উপড়ে পড়েছে আমাদের ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সেসব গাছ সড়ক থেকে সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করছে।’

প্রতিনিধি/ এসএমডব্লিউ