গত আট বছরে রাজশাহী চিনিকল (রাচিক) থেকে ২৮০ জন শ্রমিক-কর্মচারী অবসরে গেছেন। তাদের গ্র্যাচুইটি বাবদ পাওনা টাকা প্রায় ২৬ কোটি। এই টাকার দাবিতে শরীরে কাফনের কাপড় জড়িয়ে মানববন্ধন করেছেন অবসরপ্রাপ্ত এই শ্রমিক-কর্মচারীরা।

শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) বিকেলে রাজশাহী চিনিকলের ২০২৩-২৪ আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের অদূরে মানববন্ধন করেন অবসরপ্রাপ্ত এসব শ্রমিক-কর্মচারী।

তারা জানান, চিনিকল থেকে অবসর গ্রহণের পর সাত-আট বছর ধরে তারা গ্র্যাচুইটির টাকার জন্য দরজায় দরজায় ঘুরছেন। কিন্তু গ্র্যাচুইটির টাকা পাচ্ছেন না। এর কারণে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। অনেকে বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন।

অবসরে যাওয়া জ্যেষ্ঠ করণিক জাকির হোসেন বলেন, অবসরে যাওয়ার সাত বছর হয়েছে এমন শ্রমিকরা এখানে মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছে। এই টাকা জীবনের শেষ সম্বল। আমাদের পেটে ভাত নেই। তাই বাধ্য হয়ে মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছি। অনেকেই বয়স্ক হওয়ায় মানববন্ধনে আসতে পারেনি।

তিনি আরও বলেন, ২০২০ সালে অবসরে গেছি। কিন্তু গ্র্যাচুইটির টাকা এখনো পাইনি। এর মধ্যে দুইবারে ৮০ হাজার টাকা পেলেও তা কাজে লাগানো যায়নি। তাই সব পাওনা টাকা একসঙ্গে চাই।

চিনিকলের সেন্টার ইনচার্জ পদ থেকে ২০২১ সালে অবসরে যান বশির উদ্দিন। তিনি বলেন, শ্রমিকদের ঘরে খাবার নেই। অনেকের বাড়িতে চুলা জ্বলছে না। শ্রমিকরা অনাহারে-অর্ধাহারে দিন পার করছেন। অথচ পাওনা টাকা মিলছে না। কত দিন এই অবস্থা চলবে, কে জানে।

জানা গেছে, রাজশাহী চিনিকল থেকে অবসরে যাওয়া একেকজন ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত পাওনা আছেন। সাত-আট বছর ধরে তাদের টাকা দেওয়া হচ্ছে না। এর মধ্যে একবার ৫০ হাজার ও একবার ৩০ হাজার টাকা করে দিয়েছে চিনিকল কর্তৃপক্ষ। সব টাকা একসঙ্গে পরিশোধের দাবি তাদের।

এর আগে আজ শুক্রবার রাজশাহী চিনিকলের ২০২৩-২৪ আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল বাশার। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের যুগ্ম সচিব ও পরিচালক (অর্থ) খন্দকার আজিম আহমেদ। এছাড়া রাচিকের বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে।

অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের গ্র্যাচুইটির টাকার বিষয়ে রাজশাহী চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল বাশার বলেন, রাজশাহী চিনিকলের ২৮০ জন শ্রমিক-কর্মচারী গ্র্যাচুইটির মোট ২৬ কোটি টাকা পাবেন। তাদের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে কথা হচ্ছে। দ্রুতই টাকা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

শাহিনুল আশিক/এমজেইউ