বগুড়ার মহাস্থান হাট

হাত বদলে বাড়ছে সবজির দাম। পাইকারি হাটের চেয়ে খুচরা বাজারে প্রতি কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা কখনও দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে।

উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ পাইকারি হাট মহাস্থানে শীতকালীন সবজির আমদানি বেড়েছে কয়েকগুণ। হাটে ক্রেতা-বিক্রেতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমে এসেছে সবজির দাম। তবে মহাস্থান হাট থেকে কেনা সবজি ঢাকাসহ বগুড়ার পাইকারি ও খুচরা বাজারে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

হাত বদলের সঙ্গে সঙ্গে সবজির দাম প্রতি কেজিতে বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, হাটবাজারের খাজনা, শ্রমিক এবং যানবাহন খরচ মিলে সবজি খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে দ্বিগুণ দামে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বগুড়া জেলায় বছরজুড়ে ৪ লাখ মেট্রিক টন সবজি চাষ হয়। শীতকালীন সবজির চাষ হয় আড়াই লাখ মেট্রিক টন। এসব সবজি বিক্রির সবচেয়ে বড় হাট মহাস্থান। বগুড়াসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে চাষিরা সবজি বিক্রি করতে আসে এখানে। মহাস্থান হাট থেকে প্রতিদিন ছোট বড় অর্ধশতাধিক ট্রাক যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।

মহাস্থান হাটে মুলা প্রতি কেজি ৫ থেকে ৬ টাকা হলেও ১০ কিলোমিটার দূরে বগুড়ার রাজাবাজার ও ফতেহ আলী বাজারে ৮ থেকে ১২ টাকা; ফুলকপি মহাস্থানে প্রতি কেজি ৯ থেকে ১০ টাকা হলেও রাজাবাজারে ১৬ থেকে ২০ টাকা; বাঁধাকপি কেজিতে ৪ থেকে ৫ টাকা, করলা কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা, শিম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

বিক্রেতারা জানান, আমদানি বেশি হওয়ায় সবজির দাম কমে গেছে। ১৫দিন আগে যে দামে বিক্রি হয়েছে এখন তার অর্ধেক দামে বিক্রি করছেন। এবার সবজির ফলন ভালো হয়েছে বলেও তারা জানান।

বাজারদর এমন থাকলে তাদের লোকসান হতে পারে বলে জানান মোকামতলার চাষী ইয়াছিন আলী।

চট্টগ্রামের ক্রেতা ইব্রাহিম জানান, এখান থেকে যাতায়াত ভাড়া, পণ্যের ঘাটতি, লোড-আনলোড সব মিলিয়ে দাম বেড়ে যায়।

সবজি বিক্রেতা শাজাহান মন্ডল, আশরাফ আলী, বজলুর রহমান, নাফেস জানান, এক মাস আগে ফুলকপি ছিল ২৫ থেকে ৩ হাজার টাকা মণ; পরের সপ্তাহে ৮শ থেকে ১২শ টাকা বিক্রি হলেও এখন ৩৫০ থেকে ৪শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। 

১৫ দিন আগে মুলার দাম ছিল ৩০০ থেকে ৪শ টাকা মণ। এখন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা থেকে ২শ টাকায়। বাঁধাকপি ২৮ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন ১৫ থেকে ১৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

নাটোরের সিংড়া থেকে করলা নিয়ে আসা সফিক জানান, ভালো দামের আশায় তিনি এই বাজারে এসেছেন।  প্রতি কেজি করলা ৪০ টাকায় বিক্রি করছেন। সদর উপজেলার লাহিড়ীপাড়ায় ছোট আকৃতির করলা বিক্রি করছেন ৩৫ টাকায়। সেই করলা রাজাবাজারে এসে ৫০ টাকা এবং ফতেহ আলী বাজারে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে মহাস্থানের পাইকারী বাজারের সঙ্গে মিল নেই বগুড়ার বিভিন্ন বাজারের দাম।

পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, যাতায়াত ভাড়া, খাজনা, সবজি বাছাই এবং যানবাহনে উঠানো সব মিলিয়ে প্রতি কেজিতে দাম বেড়ে যাচ্ছে। মহাস্থান থেকে রাজাবাজার হয়ে ফতেহ আলী বাজারসহ অন্যান্য বাজারে সবজির দাম প্রতি কেজিতে বাড়ছে ৫ থেকে ১০ টাকা; কখনও দ্বিগুণ। 

ফতেহ আলী বাজারের খুচরা বিক্রেতা মোহাম্মদ মামুন ও মাসুদ জানান, তারা রাজাবাজার থেকে ভালো মানের সবজি কিনে খুচরা বিক্রি করেন। দোকান ভাড়া, যাতায়াত খরচ সব মিলে দাম একটু বেশি পড়ে যায়।

মহাস্থান হাট ইজারাদার মোশারফ হোসেন জানান, এই হাটে সবজির আমদানি বেশি। বিভিন্ন এলাকা থেকে চাষিরা সবজি নিয়ে আসছেন। সেই সবজি যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। এখানে খাজনা ছাড়া অতিরিক্ত কোনো অর্থ নেয়া হয় না।

বগুড়া রাজাবাজার আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পরিমল প্রসাদ রাজ জানান, পাইকারি হাট থেকে পণ্য কিনে নিয়ে আসতে খাজনা, পরিবহণ, মালামাল তোলা এবং নামানো মিলে খরচ বেড়ে যায়। দাম বর্তমানে স্থিতিশীল রয়েছে। প্রশাসনের সহযোগিতায় দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, মার্চ মাস পর্যন্ত এসব শীতকালীন সবজি পাওয়া যাবে। 

এসপি