নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন) আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী কাজী জাফর উল্যাহকে শোকজ করা হয়েছে।

বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) ফরিদপুর-৪ নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান এবং যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ মঈন উদ্দীন চৌধুরীর সই করা এ সংক্রান্ত একটি চিঠি কাজী জাফর উল্যাহকে পাঠানো হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টার মধ্যে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) গঠন করা নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির কাছে সশরীরে উপস্থিত হয়ে এ শোকজের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

কাজী জাফর উল্যাহ ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান।

কাজী জাফর উল্যাহকে দেওয়া শোকজের নোটিশে বলা হয়েছে, ‘আপনি ফরিদপুর-৪ আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মনোয়নপত্র দাখিল করেছেন যা গত ৪ ডিসেম্বর রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক ফরিদপুর কর্তৃক বৈধ মর্মে বিবেচিত হয়েছে। এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিলকারী মজিবুর রহমান চৌধুরী ১৩ ডিসেম্বর এই মর্মে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন যে, আপনি ১৩ ডিসেম্বর ভাঙ্গা উপজেলাধীন শেখপুরা বাজারে মাইক ব্যবহার করে গণসংযোগ ও পথসভা করে নির্বাচনী কার্যকলাপ চালিয়েছেন। এ ঘটনার একটি ভিডিও ক্লিপ প্রকাশিত হয়েছে। উক্ত ভিডিও পর্যালোচনায় পরিলক্ষিত হয়েছে যে, আপনি ভাঙ্গা উপজেলাধীন শেখপুরা বাজারে আগত সর্বসাধারণ, ব্যবসায়ীবৃন্দ ও দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও কুশল বিনিময়কালে একটি সভায় যোগদান করেছেন এবং উক্ত সভায় বক্তব্য প্রদানকালে আপনি নিম্নরূপ উক্তি করেছেন-

‘এমপি তো যে আছে সে তো আমাদের এলাকার না। সে হলো মাদারীপুর থেকে শিবচরের। সেই আসছে এখানে বালি কাটতে, সে আসছে টাকা বানাতে, আপনাদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে কি সে আসছে? সে বলে, কাজী মাহাবুল্লাহ একটা চোর। সে বলে যে, আমি ফকিরের গোষ্ঠীর লোক, ফক্কিনির ছেলে। আপনারা বুঝতে পারছেন যে আমারে যদি এ কথা কয়, কাজী মাহাবুল্লাহরে যদি এই কথা কয় তাহলে আপনাদের কি অবস্থা করবে। তার যে কতটা হিংসা, বিদ্বেষ।’

আপনার উক্তরূপ বক্তব্য সংসদীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা-২০০৮ এর বিধি ১১(ক) এর পরিপন্থি। একই সঙ্গে, আপনি উক্ত সভা সম্পর্কে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট হতে লিখিত অনুমতি গ্রহণ ও স্থানীয় পুলিশ কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করে সভায় অংশগ্রহণ করে উক্ত বিধিমালার বিধি ৬(খ) ও ৬(গ) লঙ্ঘন করেছেন মর্মে প্রতীয়মান হয়।

এ ছাড়া, আপনি উক্ত সভায় বক্তব্য প্রদানকালে আরও উল্লেখ করেছেন যে, ইনশাআল্লাহ এবার আমরা প্রমাণ করে দিব এই এলাকার মানুষ নৌকাকে ভালোবাসে। নৌকা প্রতীককে ভোট দিবে। কাজী জাফর উল্ল্যাহকে ভোট দিবে যা উক্ত বিধিমালার বিধি-১২ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

আপনি উক্তরূপ কার্যক্রমের মাধ্যমে সংসদীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা-২০০৮ এর বিধি ১১(ক), ৬(খ) ও ৬(গ) এর বিধান এবং তৎসহ বিধি ১২ এর বিধান লঙ্ঘন করেছেন, যা নির্বাচনপূর্ব অনিয়ম হিসেবে গণ্য করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্রে কেন বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের নিকট প্রেরণ করা হবে না তৎমর্মে আগামী ১৪ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) বিকেল সাড়ে ৩টার মধ্যে কমিটির অস্থায়ী কার্যালয়ে যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ, ২য় আদালত, জেলা ও দায়রা জজ আদালত, ফরিদপুরে ব্যক্তিগতভাবে হাজির হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা প্রদান করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।

প্রসঙ্গত, এর আগে গত ২৯ নভেম্বর বিশাল গাড়িবহর নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসে আচরণবিধি লঙ্ঘন করার অভিযোগে গত ৩০ নভেম্বর এই নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি শোকজ করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ফরিদপুর-৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরীকে। কমিটির নির্দেশ মেনে গত ১ ডিসেম্বর বিকেল ৩টায় সশরীরে কমিটির কাছে শোকজের জবাব দেন নিক্সন চৌধুরী। ওই সময় নিক্সন কমিটির কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, আগামীতে যাতে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন না হয় সে বিষয়ে তিনি  সতর্ক থাকবেন।

জহির হোসেন/এমজেইউ