মেয়ে মানুষ ঘরে কাজ করবে, বাইরে যাওয়ার দরকার কী? কাজ নাই তাই এসব করছে। এমন নানা কটু কথাকে পেছনে ফেলে নাজমা আক্তার এখন সফল উদ্যোক্তা। তার প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন ১৫ জন কর্মচারী। সব খরচ বাদে মাসে তার আয় থাকছে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা।

নাজমা আক্তার জুইয়ের বাড়ি রংপুর মহানগরের হনুমানতলা এলাকায়। নিজ উদ্যোগে বাড়ির পাশে গড়ে তুলেছেন একটি কারখানা। এ কারখানায় ১৫ জন কর্মচারী কাজ করেন। এছাড়াও রংপুর শহরে একটি কাপড়ের দোকানের পাশাপাশি একটি বিউটি পার্লারও রয়েছে।

রংপুর রোকেয়া মেলায় নাজমা আক্তার জুঁই একটি কাপড়ের স্টল দিয়েছিলেন। কাপড় বিক্রির মাঝে তিনি সফলতার গল্প শোনান ঢাকা পোস্টকে। তিনি বলেন, অল্প বয়সে আমার বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পর থেকেই আমার ইচ্ছা ছিল কিছু একটা করার। অনেক ভাবনা চিন্তার পর মাত্র পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে একটা সেলাই মেশিন কিনে নেই। তখন থেকেই কাপড় নিয়ে কাজ করা শুরু।

কাপড়ের ওপর বিভিন্ন ডিজাইন করে বিক্রি করতে থাকি। ডিজাইন পছন্দ হওয়ায় অনেক দূর থেকেও অর্ডার আসতে শুরু করে। বাড়ির পাশে ছোট দোকান দিয়ে কাপড় বিক্রি করতে থাকি। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। তবে মানুষের নানা কটু কথা শুনতে হয়েছে। মুখ বুজে সব সহ্য করি। আমি কাজের মাধ্যমে তাদের কথার জবাব দিতে চেয়েছি। এখন ব্যবসা বড় হয়েছে। অনেকেই বাহবা দিচ্ছে।

নানা কটু কথা ও সাংসারিক ব্যস্ততা থাকার পরও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ট্রেনিং নিয়েছি। কাজ কীভাবে ভালো করা যায় তার জন্য পরিশ্রম করেছি। এরপর সাহস করে ছোট একটি কারখানা দিয়ে কয়েকজন নারী শ্রমিক নিয়োগ করি। তাদের বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে নতুন নতুন ডিজাইনে কাপড় তৈরি করতে থাকি। আমাদের পণ্য গুলো রংপুর ছাড়াও বিভিন্ন জেলায় অর্ডারের মাধ্যমে বিক্রি করছি। এখন রংপুর শহরে কাপড়ের দোকান ছাড়াও বিউটি পার্লার রয়েছে। দোকান ভাড়া শ্রমিকদের মজুরি লক্ষাধিক টাকা দিয়েও প্রতি মাসে আয় থাকছে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। ঈদ ও পুজার সময় লক্ষাধিক টাকা আয় হয়। আমি আরও ভালো কিছু করতে চাই।

নাজমা আক্তারের দোকানের কর্মচারী রিনা আক্তার বলেন, আমি আপুর দোকানে কাজ করছি আজ এক বছর। আপুর সাথে কাজ করে অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। আর যা আয় হচ্ছে তা দিয়ে পরিবারকে সাহায্য করতে পারছি।

দোকানে কাপড় কিনছিলেন স্কুল শিক্ষক নাজমুন্নাহার। তিনি বলেন, দোকানগুলোতে কাপড় দেখছিলাম। এ দোকানের হাতের কাজ করা কাপড়গুলো পছন্দ হয়েছে। কাপড়ের মান ও ডিজাইন অনেক সুন্দর। আমার নিজের জন্য একটি ও মেয়ের জন্য একটি কাপড় নিয়েছি।

প্রসঙ্গত, রংপুর রোকেয়া মেলায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ফরিদপুর ও কুমিল্লা অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন পণ্য নিয়ে এসেছেন। মেলা কর্তৃপক্ষ জানান, মেলায় ১৩১টি স্টল রয়েছে। এসব স্টল থেকে মেলার কয়েকদিনে চার কোটি টাকার পণ্য কেনা-বেচা হবে বলে ধারণা বিক্রেতাদের।

শিপন তালুকদার/পিএইচ