ইতালি প্রবাসীর কবর জিয়ারতে এমপি নিক্সন চৌধুরী

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় ইতালি প্রবাসীকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করার ঘটনায় এক আওয়ামী লীগ নেতাকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে নিহতের মা হালিমা বেগম বাদী হয়ে ভাঙ্গা থানায় হত্যা মামলাটি করেন।

এদিকে বিকেলে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পৌর সদরের নওপাড়া গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে মাসুদের কবর জিয়ারত করতে আসেন ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন।

জিয়ারত শেষে তিনি বলেন, ‘যারাই নির্মমভাবে ইতালি প্রবাসী মাসুদকে হত্যা করেছেন, তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার করা হবে। হত্যাকারী যতই প্রভাবশালী হোক না কেন, সরকার এই হত্যাকাণ্ডের বিচারে কোন আপস করবে না।’

মামলায় ভাঙ্গা পৌর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর এমদাদুল হক বাচ্চুসহ ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা পাঁচ-সাতজনকে আসামি করা হয়। এদিকে ঘটনার পর থেকেই আওয়ামী লীগ নেতা এমদাদুল হক পলাতক রয়েছেন।

গত মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) রাত আটটার দিকে ভাঙ্গা পৌরসভার নওপাড়া বাসস্ট্যান্ডে এ হত্যার ঘটনা ঘটে। নিহত ইতালি প্রবাসী মাসুদ রানা ভাঙ্গা পৌরসভার গজারিয়া মহল্লার হারুন অর রশিদের ছেলে।

পৌর নির্বাচনে মাসুদ রানা ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ও ভাঙ্গা সহকারী জজ আদালত আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহুরুল হক মিঠুনের পক্ষে কাজ করছিলেন। এতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এমদাদুল হক বাচ্চুসহ তার লোকজন মাসুদ রানার ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাসুদ রানার দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তিনি দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে সপরিবার ইতালিতে বসবাস করেন। ভাঙ্গা পৌর নির্বাচন উপলক্ষে তিন মাস আগে তিনি গ্রামের বাড়িতে আসেন। ১১ এপ্রিল এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে করোনার কারণে নির্বাচন স্থগিত করা হয়। ২০ এপ্রিল ইতালি ফিরে যাওয়ার কথা ছিল মাসুদ রানার।

এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান, ভাঙ্গা পৌর এলাকার ২ নম্বর ওয়ার্ডের অধীন গজারিয়া গ্রামের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের দুপক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। এক পক্ষকে নেতৃত্ব দেন ভাঙ্গা পৌর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর এমদাদুল হক বাচ্চু।

অপর পক্ষকে নেতৃত্ব দেন ভাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজ্জাক ফকির। দুপক্ষের বিরোধের কারণে গত বছর কয়েকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে হামলা, বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার রাত আটটার দিকে মাসুদ রানা ভাঙ্গা পৌরসভার নওপাড়া বাসস্ট্যান্ডে নান্নু শেখের চায়ের দোকানে বসে গল্প করছিলেন। এ সময় ২০-২৫ জন লোক এসে তাকে লাঠি দিয়ে পেটাতে শুরু করেন। একপর্যায়ে মাসুদ রানা দৌড়ে পাশের আনোয়ারের মুদি দোকানে প্রবেশ করলে হামলাকারীরা ভেতরে গিয়ে তাকে কুপিয়ে জখম করেন।

পরে এলাকাবাসী রক্তাক্ত অবস্থায় মাসুদ রানাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে রাত সাড়ে আটটার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

এদিকে মাসুদ রানার মৃত্যুর খবর জানাজানি হওয়ার পর গজারিয়া গ্রামে পাঁচ-ছয়টি বাড়িতে হামলা করে ১৪টি গবাদিপশু লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে গজারিয়া গ্রামে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ভাঙ্গা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবুল কালাম আজাদ জানান, সাবেক কাউন্সিলর এমদাদুল হক বাচ্চুকে প্রধান আসামি করে হত্যা মামলা হয়েছে। এ মামলার এজাহারভুক্ত আসামি গজারিয়া গ্রামের জয়নাল শেখকে (৩৫) বুধবার দুপুরে গ্রেফতার করা হয়।

আওয়ামী লীগ নেতা এমদাদুল হকের বক্তব্য জানতে তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

কবর জিয়ারতের পর নিহত মাসুদের বাড়িতে গিয়ে শোকার্ত পরিবারকে সান্ত্বনা দেন সংসদ সদস্য নিক্সন। এ সময় গ্রামবাসী মাসুদকে হত্যাকারী সাবেক পৌর কাউন্সিলর বাচ্চু ও তার সহযোগীদের ফাঁসির দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন।

এমপি নিক্সন চৌধুরী সবার উদ্দেশে আরও বলেন, আপনারা আইন হাতে তুলে নিবেন না। একটি হত্যাকাণ্ডের পর ওই এলাকায় সুযোগ সন্ধানী অনেকেই নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। আপনারা শান্ত থাকুন, এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য সর্বদা আপনাদের পাশে আমি থাকব।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম হাবিবুর রহমান, সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেন, সরকারি কেএম কলেজের সাবেক জিএস লাবলূ মুন্সি, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজ্জাক ফকির প্রমুখ।

বি কে সিকদার সজল/এমএসআর