নীলফামারী-৩ (জলঢাকা) আসনে একমাত্র নারী প্রার্থী মার্জিয়া সুলতানাকে সমর্থন জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী। শুক্রবার (২২ ডিসেম্বর) রাতে বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন মার্জিয়া সুলতানা।

এর আগে সন্ধ্যায় জলঢাকা উপজেলার টেঙ্গনমারী বাজারের একটি পথসভায় ওই ঘোষণা দেন দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী।  নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেন- জলঢাকা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ শামীম (মোড়া) ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক হুকুম আলী খান (ট্রাক)। নির্বাচনী মাঠ থেকে সরে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী মার্জিয়া সুলতানার ঈগল প্রতীককে সমর্থন জানান তারা।

মার্জিয়া সুলতানা নীলফামারী-৩ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক গোলাম মোস্তফার স্ত্রী। আসনটিতে এবার আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা। একই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেছিলেন তার স্ত্রী জেলা যুবলীগের সাবেক সহসভাপতি মার্জিয়া সুলতানা, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ শামীম, উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক হুকুম আলী খান ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন পাভেল। রিটার্নিং কর্মকর্তার যাচাই-বাছাইয়ে মার্জিয়া সুলতানার মনোনয়ন বাতিল হলে তিনি নির্বাচন কমিশনে আপিল করে প্রার্থিতা ফিরে পান। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনে আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়া দলীয় সিদ্ধান্তে মনোনয়ন প্রতাহার করেন অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা। তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করলেও মাঠে থেকে যান দলের চার স্বতন্ত্র প্রার্থী।

দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, শুক্রবার বিকেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু সাঈদ শামীমের টেঙ্গনমারী বাজারের বাসভবনে দলের কিছু নেতাকর্মীর উপস্থিতে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু সাঈদ শামীম, মার্জিয়া সুলতানা, হুকুম আলী খান ছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা, সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। দীর্ঘক্ষণ বৈঠকের পর সন্ধ্যায় ওই বাসভবনের সামনে এসে মার্জিয়া সুলতানাকে সমর্থন জানিয়ে আবু সাঈদ শামীম ও হুকুম আলী খান নির্বাচনী মাঠ থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন। দুই প্রার্থীর নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে যাওয়া ঘোষণার পর এখন মাঠে রইলেন সাদ্দাম হোসেন পাভেল (কাঁচি) এবং মার্জিয়া সুলতানা।

মার্জিয়া সুলতানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে আজ দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী অনানুষ্ঠানিকভাবে দলের বৃহত্তর ঐক্য ও বিজয়ের স্বার্থে আমাকে সমর্থন করলেন। আমি তাদের প্রতি চির কৃতজ্ঞ। আমার বিশ্বাস আগামী ৭ জানুয়ারি শামীম ভাই ও হুকুম আলী ভাইকে সঙ্গে নিয়ে সর্বস্থরের নেতাকর্মী ও জনগণের সহযোগিতায় আমার মার্কা ঈগল পাখির জয় নিশ্চিত হবে। আমি জয়ী হলে বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার ভিশন স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করব।

মার্জিয়া সুলতানা জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি ও জলঢাকা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক গোলাম মোস্তফার সহধর্মিণী। দলীয় আসন বণ্টনে জাতীয় পার্টিকে আসনটি ছেড়ে দিতে গত ১৭ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের প্রার্থী গোলাম মোস্তফা তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য রানা মোহাম্মদ সোহেলের বিপরীতে মার্জিয়া নির্বাচন করবেন।

এ বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু সাঈদ শামীম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি দলীয় ঐক্য ও জলঢাকার উন্নয়নের জন্য মার্জিয়া সুলতানাকে সমর্থন করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালাম। আশা করি উনি বিজয় ছিনিয়ে নিয়ে আসবেন। মার্জিয়া সুলতানার ঈগল প্রতীকে ভোট প্রদানের আহ্বান জানাচ্ছি। 

আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী হুকুম আলী খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা ব্যক্তিস্বার্থ ভুলে মার্জিয়া সুলতানাকে সমর্থন জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে এসেছি। আমরা যেমন ব্যক্তিস্বার্থকে ভুলে গিয়ে উনাকে সমর্থন করেছি তেমনি ব্যক্তিস্বার্থকে ভুলে গিয়ে উনার বিজয় নিশ্চিত করবে জলঢাকার মানুষ।

জলঢাকা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা ঢাকা পোস্টকে বলেন, দলের ঐক্যের স্বার্থে, নির্বাচনে জয়ের স্বার্থে, জলঢাকা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ শামীম ও সাবেক যুবলীগ নেতা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী মার্জিয়া সুলতানাকে সমর্থন জানিয়েছেন। আমি আশা করছি মার্জিয়া সুলতানা জয়ী হয়ে এই এলাকার উন্নয়নে কাজ করবেন।

আসনটিতে আট প্রার্থীর মধ্যে জাতীয় পাটির প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য মেজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেল (লাঙ্গল)। তার বিপরীতে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য জেলা জাতীয় পাটির উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য কাজী ফারুক কাদের (কেটলি)। অপর প্রার্থীরা হলেন- তৃণমূল বিএনপির খলিলুর রহমান (সোনালী আঁশ) ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির বাদশা আলমগীর (হাতঘড়ি)।

শরিফুল ইসলাম/আরএআর