খুলনার জামান জুট মিলে ছিল না ফায়ার সেফটি
খুলনার দিঘলিয়ার জামান জুট মিলে অগ্নিকাণ্ডের রহস্য উদঘাটিত হয়নি। আগুন কীভাবে লেগেছে, তা কেউ জানাতে পারেননি। অগ্নিকাণ্ডের ফলে মিলের যান্ত্রাংশ ও মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেকার হয়ে পড়েছে শ্রমিকরা। মিলটিতে ছিল না ফায়ার সেফটি প্লান এবং করেননি ফায়ার লাইসেন্স নবায়ন। ফলে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে যায়, বললেন খুলনা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক মো. ফারুক হোসেন সিকদার।
ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা জানায়, দিঘলিয়া উপজেলার নগরঘাট ফেরিঘাট সংলগ্ন ভৈরব নদীর তীরে অবস্থিত জামান জুট মিলে প্রায় ৭৫০ শ্রমিক কাজ করতো। সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) রাত পৌনে ১০টার দিকে মিলটিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। কিন্তু তার আগেই দুপুরে শেষ হয়ে যায় মিলে থাকা সূতা, প্রসেসিং এবং কাঁচা পাটসহ মিলের মূল্যবান যন্ত্রাংশ।
বিজ্ঞাপন
মিলের কার্যনির্বাহী পরিচালক মো. রিপন মোল্লা বলেন, ২৫ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ৯টার পর মিলটিতে আগুন লাগে। আগুন লাগার সূত্রপাত আমরা নিজেরাই এখনো আবিষ্কার করতে পারিনি। ফায়ার সার্ভিসও আগুন লাগার ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। আগুন লাগার সময় মিলটি বন্ধ ছিল। বিদ্যুতের সকল সুইচ অফ করা ছিল। চারিদিক থেকে আগুন একসঙ্গে লাগে।
তিনি বলেন, মিলটিতে মজুদকৃত ভারতে রপ্তানিযোগ্য ৮০ টন সুতা সোমবার রপ্তানি করার কথা ছিল। কিন্তু বড় দিনের বন্ধ থাকায় পরের দিন ২৬ ডিসেম্বর রপ্তানি সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়াও মিলটিতে প্রায় দেড়শ টন কাঁচা পাট মজুদ ছিল। বিদেশে রপ্তানিযোগ্য এক টন সুতার মূল্য ৯৫ হাজার টাকা, আরেকটা ১ টন ৬০ হাজার টাকা। ১ টন কাঁচা পাটের বর্তমান মূল্য ২৪০০ থেকে ২৫০০ টাকা। ইতোমধ্যে আমাদের রপ্তানি বাতিল হয়ে গেছে। মিলটির ৭৫০ জন শ্রমিক বেকার হয়ে গেল। তাদের রুটি রুজির ওপর আঘাত পড়েছে। আগুনে সবমিলিয়ে প্রায় ৬০-৭০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে দাবি করেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
খুলনা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক মো. ফারুক হোসেন সিকদার বলেন, আগুন লাগার সংবাদ পেয়ে খুলনার চারটি ফায়ার স্টেশনের ৮টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। রাত ১১টা ২৩ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। পরে শুরু হয় ড্যাম্পিংডাউনের কাজ। আজ সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আগুন সম্পূর্ণ নির্বাপন করা সম্ভব হয়েছে। তবে আগুন লাগার কারণ এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি। ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণও জানা যায়নি। এ বিষয়ে ঢাকায় রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। ঢাকা থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করে দেবে। তদন্ত করলে সবকিছু জানা যাবে।
তিনি বলেন, তিন মাস আগে সেফটি প্লান বাস্তবায়নের জন্য মিল মালিককে নোটিশ করা হয়। কিন্তু সেটি করেননি। নির্বাচনের পর অভিযান পরিচালনার কথা ছিল। তবে তার আগেই আগুন লেগেছে। সেফটি প্লান থাকলে আগুন সহজেই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হতো। কিন্তু তিনি এগুলো করেননি। এছাড়া ফায়ার লাইসেন্স নবায়ন করার কথা থাকলেও সেটি করেননি মিল কর্তৃপক্ষ।
মিলন/এমএএস